নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি বলে পরিচিত গৌতম আদানিকে এ বারে নিশানা করল কংগ্রেস।
লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই আদানির সঙ্গে মোদীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুলকালাম চলছে। ভোটের প্রচারের সময় আদানির বিমানে চেপেই নির্বাচনী সভায় যেতেন নরেন্দ্র মোদী। ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন বিদেশ সফরেও আদানিকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রেখেছেন একই হোটেলে। মোদীর বিরুদ্ধে রাহুল গাঁধীর ‘সুট-বুট’ সরকারের হামলার নেপথ্যেও ছিল আদানির প্রকল্পকে ছাড় দেওয়ার অভিযোগ। সেই আদানির বিরুদ্ধেই এ বারে সরব হলেন ইউপিএ আমলের মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। আর তাঁর সঙ্গে বেনজির ভাবে তর্কে জুড়লেন স্বয়ং আদানিও।
জয়রামের অভিযোগ, ছত্তীসগঢ়ের একটি খনিতে আদানিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ম বদল করেছে রাজ্যের বিজেপি শাসিত সরকার। তার উপর আদানির একটি বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকার জরিমানাও কেন্দ্রের মোদী সরকার আদায় করেনি এখনও পর্যন্ত। অতীতে বড় শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণের নজির নেহাত কম নেই। অম্বানীদের বিরুদ্ধেও অরবিন্দ কেজরীবাল নিরন্তর হামলা করে গিয়েছেন। কিন্তু শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধাররা কখনও তার জবাব দিতে এগিয়ে আসেননি। বড় জোর সংস্থার পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে সাফাই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বারে রাজনৈতিক ‘তু-তু ম্যায়-ম্যায়’-এ জড়িয়ে পড়লে আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান খোদ গৌতম আদানি।
আরও পড়ুন: দিল্লি দরবারে দিদিকে ঘিরে দড়ি টানাটানি
তিনি এক সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেছেন জয়রামকে। তিনি বলেন, নিছক রাজনৈতিক কারণেই তাঁকে আক্রমণ করা হচ্ছে। ছত্তীসগঢ়ের যে খনিটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি তাঁর নয়। রাজস্থান সরকারের। রাজস্থান সরকার আদানি গোষ্ঠীকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ করেছে। আর সেই খনির অনুমোদন দিয়েছেন খোদ জয়রাম রমেশ। ইউপিএ জমানায় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে যাওয়ার আগে পরিবেশ মন্ত্রী হিসেবে এই খনির অনুমোদন দেওয়াই ছিল তাঁর শেষ সিদ্ধান্ত। আজ সেই জয়রাম রমেশই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাঁকে আক্রমণ করছেন।
২০০ কোটি টাকার জরিমানা নিয়ে সাফাই দিয়ে আদানি বলেন, সুনীতা নারায়ণের একটি কমিটি এই জরিমানার কথা বলেছিল। কিন্তু সেটি একেবারেই অনৈতিক। সেই কারণেই ইউপিএ সরকার এটি আদায় না করে ন’মাস বসে ছিল। আর নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক বছর ধরে তদন্ত করেছে। এখনও এই জরিমানা আদায়ের কথা বলেনি। আদানির দাবি, নরেন্দ্র মোদী সরকারের থেকে কোনও সুবিধাই তিনি পাননি। তাঁর সংস্থার বিমান মোদী ব্যবহার করেছেন পুরো পয়সা ভাড়া দিয়ে। ঠিক যে ভাবে কংগ্রেসের নেতারা অন্য আর একটি শিল্পগোষ্ঠী জিএমআর-এর বিমান ভাড়া করে চলেন।
কিন্তু আদানির সাফাইয়ের পরেও চুপ করে বসে থাকতে চাইছে না কংগ্রেস। জয়রাম আজ পাল্টা তোপ দেগে বলেছেন, খনির অনুমতি তিনি দিয়েছিলেন বটে। কিন্তু সেটি কিছু শর্ত সাপেক্ষে। অরণ্যের অধিকার আইনের শর্তগুলি পালন করেই এই খনিতে কাজ করার কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু আসল বিষয় হল, ছত্তীসগঢ়ের রমন সিংহ সরকার আদানিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি অরণ্যের অধিকার আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে রদবদল করেছে। আর তাতে সায় ছিল কেন্দ্রীয় আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রকের সচিবের সায়। নথি দিয়ে সেই বক্তব্য প্রমাণও করেছেন বলে দাবি জয়রামের।