দিল্লিতে জগন্মোহন রেড্ডি ও নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক ঘিরে প্রশ্ন। ছবি: পিটিআই।
একগাল হাসি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগন্মোহন রেড্ডি। তিরুপতির বালাজি দেবতার মূর্তি। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠক করলেন তাঁরা। আর দিল্লির এই বৈঠক এ দিন নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের জল্পনা উস্কে দিল।
অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর জানাচ্ছে, তিনি রাজ্যের উন্নয়ন সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু রাজনীতির কারবারিদের একাংশের জল্পনা, জগনের দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস এ বার এনডিএ জোটে শামিল হতে চলেছে। ঘটনাচক্রে, দু’সপ্তাহ আগেই দিল্লি এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জগন।
জল্পনার জন্ম হয়েছিল দু’বছর আগেই। রাজ্য রাজনীতিতে জগনন্মোহন রেড্ডির প্রতিদ্বন্দ্বী চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম এনডিএ জোট ছাড়ার পরে। কিন্তু সে সময় বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের আহ্বান উপেক্ষা করেছিলেন প্রয়াত ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডির পুত্র। এ্কা লড়েই অন্ধ্র বিধানসভা ভোটে তিন-চতুর্থাংশ আসন জিতেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, জগন সে সময় অন্ধ্রের ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন। তাই বিরোধী নেতার আসনে থেকে বিজেপির ডাকে সাড়া দেননি। তাঁদের ব্যাখ্যা, ২০১৯-এর লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে বিপুল সাফল্য ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রধানকে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি উপলব্ধি করেছেন, খণ্ডিত অন্ধ্র্রের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সাহায্য অপরিহার্য।
২০১৪ সালে রাজ্য ভাগের পরে অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী হায়দরাবাদের ‘মালিকানা’ পেয়েছে নয়া রাজ্য তেলঙ্গানা। চন্দ্রবাবু অমরাবতীতে অন্ধ্রের নয়া রাজধানী গড়ে তোলার কাজ শুরু করলেও মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জগন তাতে বদল এনেছেন। তাঁর পরিকল্পনা, অমরাবতীকে রাজ্য বিধানসভা গড়ে পরিষদীয় রাজধানী করা হবে। পাশাপাশি, বিশাখাপত্তনমে রাজ্যের নয়া সচিবালয় গড়ে ‘প্রশাসনিক রাজধানী’ এবং কুর্নুলে নয়া হাইকোর্ট স্থাপন করে ‘বিচারবিভাগীয় রাজধানী’র মর্যাদা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্য ছাড়া যা সম্ভব নয়।
জগন অন্ধ্রকে ‘বিশেষ রাজ্যে’র মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানালেও এখনও তা মানেনি মোদী সরকার। এনডিএ’তে গেলে তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টিডিপির পক্ষ থেকে অবশ্য এ দিন অভিযোগ তোলা হয়, জগন তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা ধামাচাপা দিতেই বিজেপি-মুখী হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘ধাক্কা সহ্য করে নেব, রক্ষা করব দেশ’, যোগীর পুলিশকে বার্তা রাহুলের
অতীতে এবং সাম্প্রতিক কালে সংসদে একাধিক ইস্যুতে মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে ওয়াইএসআর কংগ্রেস। এমনকি, কৃষি বিল নিয়ে বিতর্কে অকালি দলের মতো পুরনো সহযোগী ‘বিদ্রোহ’ করলেও জগনের দলের সাংসদেরা বিজেপির পাশেই ছিলেন। গত বছর লোকসভা-বিধানসভা ভোটে একা লড়ে অন্ধ্র থেকে শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে বিজেপিকে।
আরও পড়ুন: পুলিশও শেষে বলল ‘হ্যাটস অফ ম্যাডাম’, ভাঙা গলায় জানালেন প্রতিমা
জগনকে পাশে পেলে শিবসেনা ও অকালির মতো সহযোগীকে হারানোর ‘ক্ষত’ মেরামতের পাশাপাশি তেলুগু রাজনীতিতে বিজেপি নতুন প্রসঙ্গিকতা পাবে বলে মনে করছেন দলের অনেকেই। মঙ্গলবারই কি তারই ‘প্রস্তুতি’ শুরু করে দিলেন মোদী আর জগন? উত্তরটা সম্ভবত জানেন স্বয়ং বালাজিই।