বিবিসিতে আয়কর হানায় তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। ছবি: সংগৃহীত।
গতকালের পর আজও। টানা দু’দিন ‘আয়কর সমীক্ষা’ চলল ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি)-এর দিল্লি ও মুম্বই দফতরে। ফের ওই তল্লাশিকে শাসক শিবিরের ‘প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে সরব হয়েছে কংগ্রেস। অন্য দিকে, যা হয়েছে তা আইন মেনেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতারা। সব মিলিয়ে নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গুজরাত হিংসা নিয়ে বিবিসি-এর তৈরি তথ্যচিত্র এবং তার পর বিবিসিতে আয়কর হানার প্রশ্নে তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি।
বিবিসি-তে যে আরও তল্লাশি হতে পারে, গত কালই তার ইঙ্গিত দিয়েছিল আয়কর দফতর। আজ সকাল থেকেই ফের মুম্বই ও দিল্লিতে বিবিসি-র দফতরে তল্লাশি শুরু করেন আয়কর আধিকারিকেরা। এমন হতে পারে আঁচ করেই আজ সকালে কর্মীদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে বলে ই-মেল পাঠায় বিবিসি। বিবিসির ভারতীয় কর্মীদের আয়কর আধিকারিকেরা যে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, তাতে পূর্ণ সহযোগিতার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে সংবাদসংস্থার কর্মীদের সংস্থার মনোবিদের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।
গোড়া থেকেই আয়কর দফতর ওই হানাকে রুটিন সমীক্ষা বলে দাবি করেছে। মূলত কর ফাঁকি ও ট্রান্সফার প্রাইসিং সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখতেই ওই সমীক্ষা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়কর দফতর। সূত্রের মতে, আয়কর আধিকারিকেরা সংস্থার কম্পিউটার ও ল্যাপটপে ‘শেল কোম্পানি,’ ‘ফান্ড ট্রান্সফার,’ ‘ফরেন ট্রান্সফার’-এর মতো শব্দগুলি খুঁজেছেন। গতকালই সংস্থার সন্ধ্যাকালীন বিভাগের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিল বিবিসি। আজও সংস্থার দুই শাখার শীর্ষ কর্তা ছাড়া বাকিদের বাড়ি থেকেই কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিবিসি’র দফতরে আয়কর হানাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে বর্ণনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এটা প্রতিহিংসা। এটা শুধু বাক্স্বাধীনতার প্রশ্ন নয়। দেশে কোনও সংবাদমাধ্যম থাকবে না।’’ তাঁর মতে, ক্ষমতায় থাকলেই যা খুশি করা যায় না। আইনি সমস্যা থাকলে চিঠি যেত। কথা বলা যেত। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কখনও কখনও বিচারব্যবস্থাকেও কুক্ষিগত করতে চায়। এরা (বিজেপি সরকার) চাওশেস্কু, হিটলারের থেকেও বেশি!’’ যদিও সরকারের শীর্ষ সূত্রের দাবি, সমীক্ষার বিষয়ে আগেই ওই সংস্থাকে চিঠি ও নোটিস পাঠানো হয়েছিল। হঠাৎ করে তল্লাশি চালানো হয়নি। এটি দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া।
গত কাল বিবিসি দফতরে আয়কর আধিকারিকদের তল্লাশির একটি ভিডিয়ো আজ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যাতে দেখা গিয়েছে, এক আয়কর আধিকারিক দফতরে প্রবেশের জন্য চাবি চাইলে সংস্থার কর্মীরা পাল্টা ওয়ারেন্ট দেখতে চান। তাতে ওই আধিকারিক রেগে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে সকলকে ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। এক মহিলা কর্মী ওই আধিকারিককে ভদ্র ভাষায় কথা বলার অনুরোধ করলে, ক্ষিপ্ত ওই আধিকারিক জানতে চান, কেন দশ মিনিট ধরে গেট খোলা হচ্ছে না! যে ভাবে বিবিসির দফতরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, তা ভারতের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর বলে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ভারত প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ক্রমশ নীচের দিকে নামছে। ২০২২ সালে ভারত ছিল ১৫০-এ। এই তল্লাশির ঘটনায় সূচকে আরও নিচে নামবে ভারত।’’ লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা অধীর চৌধুরী আজ বহরমপুরে বলেন, ‘‘বিবিসি যেহেতু গোধরা কাণ্ড প্রকাশ করে দিল, তাই বিবিসির উপরে হামলা শুরু হয়েছে। সমীক্ষা নয়, ওদের ভয় দেখানো শুরু হয়েছে।’’ আর খেরার মতে, আদানি গোষ্ঠীর দুর্নীতি ফাঁস করা হিন্ডেনবার্গ সংস্থার এ দেশে দফতর থাকলে ওই সংস্থার বিরুদ্ধেও কেন্দ্রীয় এজেন্সি সক্রিয় হয়ে উঠত।
অবশ্য বিরোধীদের সমস্ত দাবি উড়িয়ে দিয়ে সরকারের শীর্ষ সূত্রের দাবি, ‘আইনের চোখে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সব সংবাদসংস্থাই সমান। এ ক্ষেত্রে সমীক্ষার কাজ আইন মেনেই হয়েছে। আয়কর সমীক্ষার ফলে ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না।’ বিবিসির তথ্যচিত্র সামনে আসার পরেই এই তল্লাশিতে সরকারের প্রতিহিংসামূলক চরিত্র ফুটে উঠেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগও মানতে চাননি সরকারের শীর্ষ ওই নেতা। তিনি বলেন, ‘‘এখন সমীক্ষা করেছি বলে এক কথা বলা হচ্ছে। কিছু দিন পরে করলে বলা হত, ভোটের আগে বার্তা দিতে ওই তল্লাশি করা হচ্ছে। যা হচ্ছে তা আইন মেনেই হচ্ছে।’’