ফাইল চিত্র।
ধর্মীয় স্বাধীনতার সীমা কতটা এবং একটি ধর্মের আচার নিয়ে ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তি জনস্বার্থ মামলা করতে পারেন কি না, এমনই সাতটি প্রশ্নের মীমাংসা করতে আজ শুনানি শুরু করল সুপ্রিম কোর্ট। সওয়ালে কেন্দ্র জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কোনও ধর্মীয় মিছিলে কত জন যাবেন তা আইন মেনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে।
আজ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ‘‘ধর্মাচরণের ধর্মনিরপেক্ষ দিক অর্থাৎ আইন-শৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে রাষ্ট্র আইন তৈরি করতে পারে।’’ বিচারপতিরা বলেন, ‘‘যেমন অনেক সময়ে ধর্মস্থানে অর্থদান করেন ভক্তেরা। কিন্তু সেই দানের টাকা সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বা ক্যাসিনো চালানোর মতো কাজে ব্যবহার করা হলে সেটা ধর্মাচরণের ধর্মনিরপেক্ষ দিকের মধ্যে এসে পড়ে।’’ সওয়ালের মধ্যেই অন্য প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে বলেন, ‘‘কী ভাবে নমস্কার করতে হবে বা নমাজ পড়তে হবে তা নিয়ে আইন তৈরি হলে তা অধিকারের হস্তক্ষেপের শামিল।’’ তাঁর কথা মেনে নিয়ে সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘প্রতিদিন কত বার নমাজ পড়তে হবে তা নিয়ে আইন তৈরি হলে তা-ও অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল। কিন্তু যদি মিছিল বেরোয় তবে আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিস্থিতি বিচার করে আইনি নিয়ন্ত্রণ জারি হতে পারে। বলা হতে পারে মিছিলে ৫০০ বা ১০০ জন অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘যেমন ধর্মের আড়ালে নরবলি বা সতীর মতো প্রথা বন্ধ করতে ব্যবহার করা হয় ভারতীয় দণ্ডবিধি।’’ সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র সামাজিক কল্যাণ ও সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে ধর্মীয় আচারের উপরে প্রভাব ফেলবে এমন আইনও আনতে পারে।’’
শবরীমালা মন্দিরে সব বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকারের পক্ষে রায় পুনর্বিবেচনার সময়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, অন্য ধর্মেও মহিলাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। মসজিদে মহিলাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মামলা হয়েছে। পার্সি মহিলারা অন্য সম্প্রদায়ের ব্যক্তিকে বিয়ে করলে অগ্নিমন্দিরে অগ্নির কাছে যেতে দেওয়া হয় না তাঁদের। এর পরেই ধর্মাচরণের মৌলিক অধিকার ও তার সঙ্গে সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের সম্পর্ক নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের মীমাংসার জন্য ৯ সদস্যের বেঞ্চ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ আদালত। এই বেঞ্চে শুনানির মাধ্যমে এই ধরনের প্রশ্নের মীমাংসার জন্য একটি বিচার বিভাগীয় নীতি তৈরি করবে সুপ্রিম কোর্ট। মীমাংসার জন্য সাতটি আইনি প্রশ্ন তৈরি করেছে ৯ সদস্যের বেঞ্চ।