হতাশ: সাংবাদিক বৈঠকে মায়াবতী। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
হাতির হাতে রইল পেনসিল!
রাজনীতিকরা এমনও বলছেন, এমন কাদায় পড়েছে মায়াবতীর হাতি যে উঠে দাঁড়ানো কঠিন। লোকসভায় এখনই বসপা-র সদস্য নেই। বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্যসভাতেও পরের বার দলীয় প্রার্থীদের জেতানোর অবস্থায় নেই তারা। ফলে আগামী এপ্রিল মাসের পরে সংসদের দুই কক্ষই বসপা-শূন্য থাকবে। এমনটা যে বসপার ইতিহাসে হয়নি তা মানছেন দলের নেতারাই।
রাজনীতিকদের মতে, এই ফল আকস্মিক নয়। মায়াবতীর লেখচিত্র পড়তে শুরু করেছিল ২০১২ থেকেই। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হার, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে একটি আসনও না পাওয়ার পরে এ দিন হারের হ্যাটট্রিক হয়েছে। বসপা-র প্রাক্তন নেতা দাদ্দু প্রসাদ (যিনি বহুজন মুক্তি মোর্চা গড়েছেন) জানাচ্ছেন, ‘‘কাঁসিরামের আদর্শে ছুরি মেরে দলিত ভোটব্যাঙ্ককে অবহেলা করতে শুরু করেছিলেন বহেনজি। ২০০৭-এর জয়ের পর বাড়তি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিলেন উচ্চবর্ণকে। ২০১২ থেকেই তার দাম দিতে হচ্ছে।’’
রাজনীতিকরা জানাচ্ছেন, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে আরএসএস দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণির তৃণমূল স্তরে ঢুকে কাজ করতে শুরু করে। ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা আরএসএস তথা বিজেপি-কে রুখতে মায়াবতী দলিত ভোটের উপর পুরনো আস্থা রাখতে পারেননি। যার প্রমাণ, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের উপর জোর দিতে শতাধিক মুসলিম প্রার্থীকে টিকিট দেওয়া। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল তাঁর দুকূলই গিয়েছে। ১৯৮৪ সাল থেকে তৈরি দলিত ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছে। সংখ্যালঘু ভোটও জোটেনি। অথচ এই মায়াবতীই তাঁর বিখ্যাত ‘সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং’ তত্ত্ব খাটিয়ে ২০০৭ সালে উচ্চবর্ণ, দলিত এবং সংখ্যালঘু ভোটের মিশ্রণ ঘটিয়ে লাভ পেয়েছিলেন। অনেকের মতে, নভেম্বর মাসে মোদীর পুরনো নোট বাতিলের সিদ্ধান্তেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মায়াবতীর দল। নির্বাচন কমিশনের প্রতি বারের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে কাঁচা টাকার খেলা চলে। এক লপ্তে বিপুল অর্থ বাতিল হয়ে যাওয়ার ধাক্কা বসপা নেত্রী আর সামলাতে পারেননি।
বহেনজি এর পরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন নাকি তাঁর দলিত রাজনীতির অধ্যায়ে পূর্ণচ্ছেদ পড়ে গেল— এই প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। এটা ঘটনা, কোনও উত্তরসূরিও তৈরি করেননি মায়াবতী। দলিত আন্দোলনকারী ও লেখক এ আর আকেলার মতে, ‘‘ফিরতে চাইলে মায়াবতীকে দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণিকে নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।’’ আকেলার বক্তব্য, ‘‘অখিলেশের দেওয়া সপা-বসপা জোটের প্রস্তাবটিও মায়াবতী ভেবে দেখতে পারেন।’’