রাজ্যসভার অধিবেশন এ বারে পা দেবে ২৫০-তম পর্বে।
লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা। কিন্তু রাজ্যসভায় নেই। গত পাঁচ বছর ধরে এই বাধা বারবার সমস্যায় ফেলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। মোদীর মন্ত্রীরা বলেছেন, লোকসভায় মানুষের সরাসরি ভোটে জিতে আসা সাংসদদের পাশ করা বিল রাজ্যসভা আটকে দিতে পারে না।
সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। রাজ্যসভার অধিবেশন এ বারে পা দেবে ২৫০-তম পর্বে। রাজ্যসভার ভূমিকায় সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা নিয়ে এ বার বিতর্ক হবে। এবং তা অধিবেশন শুরুর প্রথম দিনেই। রাজ্যসভার সাংসদ অরুণ জেটলি-রাম জেঠমলানীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে প্রথমার্ধের অধিবেশন শেষের পরে দ্বিতীয়ার্ধে সাংসদরা বিতর্কে অংশ নেবেন। যার বিষয়, ‘ভারতের রাজনীতিতে রাজ্যসভার ভূমিকা— সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা’।
রাজ্যের বিধায়কদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া রাজ্যসভার প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা নিয়ে সংবিধান পরিষদেও বিতর্ক হয়েছিল। জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে তৈরি কেন্দ্রীয় সংবিধান কমিটি রাজ্যসভা গঠনের সুপারিশ করে। সেই কমিটিতে ছিলেন সংবিধানের প্রণেতা বি আর অম্বেডকরও। একমাত্র অর্থ বিল ছাড়া লোকসভায় পাশ হওয়া যে কোনও বিল সংশোধন করে ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা দেওয়া হয় রাজ্যসভাকে। তার ফলেই মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জমি অধিগ্রহণ থেকে হালফিলের তিন তালাক— অনেক বিলেই রাজ্যসভায় হোঁচট খেয়ে অধ্যাদেশের পথ নিয়েছে। সোমবারের বিতর্কের বিষয় দেখে অনেক দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, বিষয়টি কি নিছক আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে? না কি রাজ্যসভার ক্ষমতা কাটছাঁট করার কথা ভাবছে মোদী সরকার?
নজরে উচ্চকক্ষ
সোমবার থেকে শুধু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। সেই সঙ্গে রাজ্যসভার ২৫০-তম অধিবেশন
রাজ্যসভার বিশেষত্ব
• সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হলে বা
কোনও সরকার মেয়াদের আগেই পড়ে গিয়ে নতুন করে নির্বাচন ঘোষণা করলে লোকসভা ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজ্যসভা ভেঙে দেওয়া হয় না। রাজ্যসভার অধিবেশনে কোনও ছেদ পড়ে না। ১৯৫২ থেকে রাজ্যসভার অধিবেশন চলছে। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্যসভার ২৫০-তম অধিবেশন।
রাজ্যসভার প্রয়োজনীয়তা
• এ নিয়ে বিতর্ক বরাবরের। মোদী জমানায় লোকসভায় সরকারের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও রাজ্যসভায় তা না থাকায় বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে। একটি মত হল, ভারসাম্য রক্ষার জন্য রাজ্যসভার প্রয়োজন। বিরুদ্ধ মত হল, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি লোকসভার সিদ্ধান্ত রাজ্যসভার খারিজ করে দেওয়াটা অগণতান্ত্রিক
বিশ্বের ৪০ শতাংশের বেশি সংসদে দু’টি কক্ষ আছে
• সংবিধান পরিষদে রাজ্যসভার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিতর্ক হয়। সংবিধান পরিষদ দ্বারা গঠিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সংবিধান কমিটি লোকসভার পাশাপাশি রাজ্যসভা তৈরির সুপারিশ করেন। সেই কমিটিতে ছিলেন বি আর অম্বেডকরও।
রাজ্যসভার মোট আসন ২৪৫। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ১২৩ জনের সমর্থন। গত কয়েক মাস ধরেই অন্য দল থেকে একটু একটু ধরে ভাঙিয়ে আনা হচ্ছে বিরোধী সাংসদদের। এই করে শরিক ও মনোনীতদের সঙ্গে নিয়ে উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। আজ সর্বদলীয় বৈঠকে বিএসপি নেতা সতীশ মিশ্র দল ভাঙানো বন্ধ করতে নির্বাচনী সংস্কারের সুপারিশ করেছেন।
আরও পড়ুন: প্রশ্ন রেখেই বরফ-উপত্যকায় ফিরল রেলগাড়ি
রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২৫০-তম অধিবেশন উপলক্ষে ২৫০ টাকার রূপোর মুদ্রা, ডাকটিকিট প্রকাশ করা হবে। প্রকাশিত হবে দু’টি স্মারকগ্রন্থও। আজ উপরাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দলের নেতাদের চা-চক্রে আমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সাংসদদের অনুপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। চলতি অধিবেশনেই ১৯৪৯-এর ২৬ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭০ বছর পূরণ হচ্ছে। সেই উপলক্ষে ২৬ নভেম্বর যৌথ অধিবেশনের ডাক দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, সেখানে কেন শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বক্তা হবেন? অন্য দলের নেতাদেরও বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হোক।