বিজেপি-র বিরুদ্ধে তদন্তে অগ্রগতির কোনও খবর নেই।
ঠিক দু’বছর আগে ২০১৫-র ৯ জুলাই মধ্যপ্রদেশের ব্যপম (ব্যবসায়িক পরীক্ষা মণ্ডল) কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। অভিযোগের আঙুল মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, তাঁর স্ত্রী সাধনা সিংহ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী-সহ বিজেপি-আরএসএসের বহু শীর্ষ নেতার দিকে।
কর্নাটকে বিজেপি নেতা গালি জনার্দন রেড্ডির বিরুদ্ধে লোকায়ুক্ত রিপোর্ট দিল, তিনি বেআইনি পথে ৩৬ হাজার কোটি টাকার আকরিক লোহার খনন ও রফতানি করেছেন। নাম জড়াল একাধিক শীর্ষ বিজেপি নেতার। শুরু সিবিআই তদন্ত।
ছত্তীসগঢ়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার রেশন কেলেঙ্কারি বা রাজস্থানে ৪৫ হাজার কোটি টাকার খনি দুর্নীতি নিয়ে অবশ্য সিবিআই তদন্ত হয়নি। আবার খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, তখন গুজরাত স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ২০ হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। যদিও সেই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত তো দূর, রাজ্য কংগ্রেসের তোলা বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিই মানেননি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: সঙ্ঘের কোপে এ বার গালিবও
তালিকাটা ছোট নয়। কিন্তু ঘটনা হল, একটি তদন্তেও অগ্রগতির কোনও খবর নেই। তেমন কিছুই নাকি পায়নি সিবিআই!
শুধু তো আর্থিক কেলেঙ্কারি নয়। একাধিক গুরুতর মামলার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিজেপি-বিরোধীরা। গুজরাত দাঙ্গায় অন্যতম অভিযুক্ত তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ থেকে শুরু করে মালেগাঁও বিস্ফোরণ বা সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণে যুক্ত বিজেপি-ঘনিষ্ঠ অভিযুক্তদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বহু বার।
আর এই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশ্নটা তুলছেন বিরোধীরা। লালু প্রসাদ, মায়াবতী, চিদম্বরম, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধেছে সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতর। অথচ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে বা বিজেপি শাসিত রাজ্যের দুর্নীতিতে এরাই আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব! অভিযোগ, বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করতেই সিবিআই-ইডিকে কাজে লাগাচ্ছেন মোদী-অমিত শাহ।
কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের কথায়, ‘‘বিরোধী দল শাসিত এমন কোনও রাজ্য বা এমন কোনও বিরোধী দল নেই, যাদের বিরুদ্ধে সিবিআই হানা দেয়নি বা ইডি নোটিস পাঠায়নি। আর বিজেপি শাসনে, তা সে কেন্দ্রেই হোক বা রাজ্যে, কোথাও কিছু নেই!’’
অভিযোগ উড়িয়ে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর দাবি, ‘‘কারও বিরুদ্ধে কোনও তদন্তেই সরকার নাক গলাচ্ছে না। সিবিআই, ইডি আইন অনুযায়ী নিজের মতো কাজ করছে।’’
বিজেপি নেতা বা বিজেপি শাসিত রাজ্যের একাধিক বড় কেলেঙ্কারির ঘটনায় কেন সিবিআই-ইডি-আয়কর তদন্ত হয়নি? এ ক্ষেত্রে বিরোধী নেতারা নিজেদের দুর্বলতা মানছেন। তাঁদের যুক্তি, ওই রাজ্যগুলিতে আরও জোরদার আন্দোলন হলে সিবিআই তদন্তের জন্য চাপ তৈরি করা যেত।
ব্যপম বা রেড্ডিদের বিরুদ্ধে তদন্ত এগোয়নি কেন? সিবিআই সূত্রের দাবি, ব্যপম কেলেঙ্কারির পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের খোঁজ এখনও মেলেনি। একই ভাবে রেড্ডিদের দোষী সাব্যস্ত করার মতো প্রমাণ জোগাড়েও অসুবিধা হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, ব্যপম কেলেঙ্কারিতে অন্তত ৫০ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নোট-বাতিলের বাজারে রেড্ডি ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অথচ সিবিআই-ইডি প্রমাণ পাচ্ছে না! ‘‘এমন অবিশ্বাস্য কাণ্ড মোদী-অমিত শাহই ঘটাতে পারেন’’— বলছেন এক কংগ্রেস নেতা।