ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্যাঁচে ফেলতে গিয়ে কি বিজেপি উত্তরাখণ্ডে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ডেকে আনল?
আজ উত্তরাখণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজেপির তরুণ নেতা পুষ্কর সিংহ ধামি শপথ নিলেন। কিন্তু তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বাছাই করা নিয়ে রাজ্যের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ চরমে উঠল। বিজেপি সূত্রের খবর, খোদ অমিত শাহকে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হয়েছে। শপথগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়ে গেলেও আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে উত্তরাখণ্ডে দলের নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিজেপি নেতৃত্বকে চিন্তায় ফেলেছে।
পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো উত্তরাখণ্ডের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তীরথ সিংহ রাওয়তকেও উপনির্বাচনে জিতে আসতে হত। উত্তরাখণ্ডে উপনির্বাচন করাতে হলে বাংলাতেও উপনির্বাচন করানোর দাবি উঠত। তীরথকে পদত্যাগ করিয়ে বিজেপি নেতারা মনে করছিলেন, কোভিড পরিস্থিতির জন্য ছ’মাসের মধ্যে উপনির্বাচন না হলে মমতাকেও পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে। কিন্তু শনিবার নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পুষ্করের নাম ঠিক হতেই রাজ্য সভাপতি মদন কৌশিক, কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া প্রবীণ মন্ত্রী সতপাল মহারাজ, হরক সিংহ রাওয়ত-সহ আধ ডজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষোভ সামলাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি পুষ্কর নিজেও সক্রিয় হন। তিনি নিজে গিয়ে তীরথ, সতপাল ও আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়তের সঙ্গে দেখা করেন। বিজেপি নেতাদের একের পর এক বৈঠকের পরে ঠিক হয়, নতুন মুখ্যমন্ত্রী এলেও মন্ত্রিসভায় কোনও রদবদল হবে না।
বিজেপির সূত্রের খবর, সতপাল কংগ্রেসের দিকে পা বাড়িয়ে ফেলেছিলেন। উত্তরাখণ্ডে বিজেপি ২০২২-এ জিতে এলে তাঁকে পূর্ণ সময়ের মুখ্যমন্ত্রী করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তীরথকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হতে পারে। চলতি সপ্তাহেই বুধ বা বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার রদবদল হতে পারে। তবে শুধু মাত্র মমতাকে প্যাঁচে ফেলতে তীরথকে সরানো হয়েছে বলে বিজেপি নেতারা মানতে নারাজ। বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা, তীরথ গোষ্ঠী কোন্দল সামাল দিতে পারেননি। তাঁর নেতৃত্বে ভোটে গেলে বিজেপি পিছিয়ে থাকত।
এমনিতেই উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়— সর্বত্রই বিজেপির অন্দরে বিবাদ চলছে। তার পরেও উত্তরাখণ্ডে কেন আপত্তি সত্ত্বেও পুষ্করকে মুখ্যমন্ত্রী করা হল? বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা, রাজ্য সভাপতি মদন কৌশিক গাঢ়বালের ব্রাহ্মণ নেতা। কুমায়ুন থেকে ঠাকুর নেতা পুষ্করকে মুখ্যমন্ত্রী করে ভারসাম্য তৈরি করা হল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণের দিনেই পুষ্করের ছয় বছরের পুরনো টুইট নিয়ে বিতর্ক বেঁধেছে। ‘রাষ্ট্রভক্ত’-দের ‘অখণ্ড ভারত’-এর স্বপ্নের কথা জানিয়ে পুষ্কর একটি
গেরুয়া রঙের মানচিত্রের ছবি টুইট করেছিলেন। সেই অখণ্ড ভারতের মানচিত্রে একগুচ্ছ প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাকলেও লাদাখ বা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ছিল না। তাঁর আরও একটি টুইট নিয়েও কংগ্রেস নেতারা রসিকতা শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রয়োজন না থাকলে আলো-পাথা বন্ধ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর পরে পুষ্কর টুইট করেন, তিনি আগে স্নান করতে যাওয়ার সময় শুধু পাখা বন্ধ করতেন। মোদীর কথা শুনে পাখার সঙ্গে আলোও নেভাচ্ছেন!