সইথালাভি (বাঁ দিকে)। জয়পালান। ১২ কোটির লটারির টিকিটের দুই দাবিদার। তা হলে আসল মালিক কে?
১২ কোটি টাকার লটারির মালিক কে? চর্চা তুঙ্গে উঠলেও পুরস্কার ঘোষণার দিনও তার উত্তর পায়নি কেরল। কিন্তু পুরস্কার ঘোষণার এক দিন কেটে যাওয়ার পর হঠাৎই উদয় হলেন এক ব্যক্তি। ভারত থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে দুবাই থেকে ওই ব্যক্তি দাবি করলেন লটারির ১২ কোটি টাকার মালিক তিনিই।
কেরলের ওয়েনাডের বাসিন্দা সইথালাভি দুবাইয়ে বসে দাবি করলেন টিকিট নম্বর টিই ৬৪৫৪৬৫ তাঁরই। টিকিটের মালিক কে তা জানার জন্য যখন মুখিয়ে ছিল গোটা রাজ্য, ঠিক তখনই সইথালিভির এমন দাবিকে ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। নিজেকে টিকিটের মালিক বলে ঘোষণার পর পরই রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যান সইথালাভি।
তাঁকে নিয়ে যখন হইচই হচ্ছে, ঠিক তখনই কোচি থেকে এক অটোচালক ওই একই সংখ্যার টিকিট দেখিয়ে দাবি করলেন ১২ কোটি টাকার অধিকারী তিনিই। আর এখান থেকেই বিভ্রান্তির সূত্রপাত। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, একই টিকিটের দু’জন মালিক হয় কী করে। তা হলে টিকিটের আসল মালিক কে? সইথালাভি নাকি অটোচালক জয়পালান?
সইথালাভি দুবাইয়ের একটি হোটেলে কাজ করেন। তাঁর দাবি কেরলে তাঁরই এক বন্ধু আহমেদকে বলেছিলেন ১২ কোটির একটা টিকিট কাটতে। সেই বন্ধু নাকি টিই ৬৪৫৪৬৫ নম্বরের টিকিটটি কাটেন এবং সেটার ছবি হোয়াটসঅ্যাপে তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এবং তিনি ওই বন্ধুকে অনলাইনে টিকিট কেনার টাকাও দিয়ে দিয়েছিলেন। নিজেকে টিকিটের মালিক হিসেবে দাবি করার পর সাক্ষাৎকারে সইথালাভি বলেছিলেন সেই টাকা দিয়ে তিনি কী কী করতে চান।
একই টিকিটের দুই দাবিদার নিয়ে যখন বিভ্রান্তি চরমে, ঠিক সেই সময় সইথালাভির বন্ধু আহমেদ সামনে আসেন। তিনি দাবি করেন, কোনও লটারির টিকিট তিনি কেনেননি। শুধুমাত্র একটি টিকিটের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে ফরোয়ার্ড করেছিলেন। আর সেই টিই ৬৪৫৪৬৫ নম্বরের টিকিটের ছবিটি তিনি ফেসবুক থেকে পেয়েছিলেন। শুধুমাত্র বন্ধুক সঙ্গে মজা করার জন্যই এ কাজটা করেছিলেন বলে দাবি করেন আহমেদ। কিন্তু তার জল যে এত দূর গড়াবে ভাবতে পারেননি। সংবাদমাধ্যমের কাছে আহমেদ বলেন, “সইথালাভি বিষয়টি জানার পরে আমাকে মজা করে বলেছিল যে সে নিজেকে এই টিকিটের বিজেতা হিসেবে ঘোষণা করবে। ভেবেছিলাম ও সত্যিই মজা করছে। কিন্তু সত্যিই সত্যিই নিজেকে প্রথম পুরস্কারজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে দেবে ভাবতে পারিনি।” তবে বিষয়টা সইথালাভি মজাচ্ছলেই করেছেন বলে দাবি আহমেদের।
কিন্তু তার পরেও সইথালাভি নিজেকে পুরস্কারজয়ী হিসেবে প্রামাণ করার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যান। আহমেদের দাবিকে নস্যাৎ করে তিনি পাল্টা বলেন, “আহমেদই আমাকে টিকিটের ছবি পাঠিয়েছিল। এখন ও আমাকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে।” আহমেদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সইথালাভি।
যখন সইথালাভি নিজেকে বিজেতা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন, তখন টিকিটের আসল মালিক জয়পালানকে পুরস্কারজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে রাজ্য সরকারে লটারি দফতর। আসল মালিক প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে পড়েন সইথালাভি। শেষমেশ নিজের ভুল স্বীকার করেন তিনি। সেই সঙ্গে দাবি করেন, নিজেকে টিকিটের মালিক বলে ঘোষণা করে মজা করতে চেয়েছিলেন মাত্র। কিন্তু তাঁর এই কাজের ফলে যে ভাবে প্রচারের আলোয় চলে এসেছিলেন তাতে সত্যি কথাটা বলার আর সাহস দেখাননি।