আরব সাগরেই থাকবে ভারতীয় নৌবাহিনীর দীর্ঘদিনের গর্ব আইএনএস বিরাট। ৬০ বছরের এই পুরনো রণতরীকে সাজানো হবে বিলাসবহুল হোটেল, মিউজিয়ম, হেলিপ্যাড দিয়ে। ৮৫২ কোটি টাকা দিয়ে এই প্রকল্পটি হচ্ছে মহারাষ্ট্র সরকারের উদ্যোগে। পিপিপি মডেলে টাকা তোলা হবে বলে জানিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।
৬০ বছর আগে প্রথম যাত্রা শুরু করে আইএনএস বিরাট। ১৯৫৯ সালে ইংল্যান্ডের নৌবাহিনীতে এইচ এম এস হার্মেস নামে যোগ দিয়েছিল এই রণতরী। ১৯৮৪ সালেই ব্রিটিশ নৌবাহিনী থেকে বাতিল হয় এই যুদ্ধজাহাজ। বিক্রি করে দেওয়া হয় ভারতকে। ১৯৮৭ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীতে আইএনএস বিরাট নামে যোগ দেয় এই রণতরী।
১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড দ্বীপের দখল নিয়ে ইংল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধ বাধে আর্জেন্টিনার। দক্ষিণ অতলান্তিক মহাসাগরে টানা দশ সপ্তাহ যুদ্ধের পর শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করে আর্জেন্টিনার সেনাবাহিনী। সেই যুদ্ধে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রেখেছিল এই যুদ্ধজাহাজই।
রাশিয়া থেকে বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রমাদিত্য যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত আইএনএস বিরাটই ছিল ভারতীয় নৌবাহিনীর সব থেকে গর্বের যুদ্ধজাহাজ। টানা ৩০ বছর ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে থাকার পর শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে অবসর নেয় আইএনএস বিরাট। আপাতত তার ঠিকানা আরব সাগর তীরের মুম্বই।
বাতিল যুদ্ধজাহাজটিতে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, থিম পার্ক বিলাসবহুল হোটেল, ক্যাফেটেরিয়া, হেলিপ্যাড, মিউজিয়ম, গ্যালারি তৈরির পরিকল্পনা করছে মহারাষ্ট্র সরকার। করা যাবে স্কুবা ডাইভিং। টাকা তোলা হবে সরকারি- বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে।
বাতিল যুদ্ধজাহাজকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করার ঘটনা ভারতে এই প্রথম। সারা পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত মাত্র সাতটি ক্ষেত্রে এই ধরনের রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। তাই আপাতত আরও বেশ কিছু দিন বেঁচে থাকছে পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন যুদ্ধজাহাজ।
বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হলেও এটি আসলে যুদ্ধজাহাজ। অনেক নৌসেনার শ্রম আর রক্ত জড়িয়ে আছে এই জাহাজের ইতিহাসের সঙ্গে। সেই মর্যাদা যাতে কোনও ভাবে ক্ষুণ্ণ না হয়, সেই বিষয়টি মাথায় রাখা হবে বলে জানিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।
২৩ জুলাই, ২০১৬। মুম্বই থেকে কোচি যাওয়ার পথে শেষবারের মতো নিজের শক্তিতে সমুদ্রে যাত্রা করেছিল আইএনএস বিরাট। বছরের শেষে তাকে টেনে নিয়ে আসা হয় মুম্বই। আপাতত মুম্বইতেই আরব সাগরের পারে অবসর জীবনটা কাটাবে এই যুদ্ধজাহাজ।