৩০ বছর ধরে ভারতীয় জলসীমাকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো রক্ষা করেছে এই সুবিশাল রণতরী। ছবি: সংগৃহীত।
বয়স ৫৮ বছর। অবসর আর দু’সপ্তাহেই। কিন্তু অবসরের পর তার ভাগ্যে কী রয়েছে, তা এখনও স্থির করে উঠতে পারেনি দেশের সরকার। কিছু বছর আগে অবসর নেওয়া সতীর্থ বিক্রান্তের সঙ্গে যা ঘটেছে, বিরাটের ভাগ্যেও কী তা-ই অপেক্ষায়? দুশ্চিন্তায় ভারতীয় নৌসেনা।
আইএনএস বিরাট— ভারতীয় নৌসেনার হাতে থাকা প্রাচীনতম এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার। এটুকু বললেও পুরোটা বোঝা যায় না। এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবীতে যতগুলি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার সচল, আইএনএস বিরাট সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে পুরনো। কিন্তু আগামী ৬ মার্চ ভারতীয় নৌসেনা থেকে ‘ডিকমিশনড’ হতে চলেছে আইএনএস বিরাট। দীর্ঘ ৩০ বছর ভারতের জলসীমাকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো রক্ষা করেছে এই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার। এ বার অবসরের পালা। অবসরের পর আইএনএস বিরাটকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু খরচ জোগাবে কে, সেই প্রশ্নকে ঘিরেই প্রস্তাবটি এখন বিশ বাঁও জলে। ডিকমিশনিং-এর পর আদৌ মিউজিয়াম হবে, নাকি লোহা-লক্কড়ের দরে আইএনএস বিরাটকে বিক্রি করে দেওয়া হবে, তা নিয়েই এখন জল্পনা শুরু হয়েছে।
১৯৮৭ সালে ভারতীয় নৌসেনার হাতে এসেছিল আইএনএস বিরাট। তবে তার আগে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভিতে ২৭ বছর কাজ করেছে এই সুবিশাল যুদ্ধজাহাজটি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বরাবরই এই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারটির দক্ষতা, নকশা, প্রযুক্তি এবং বিধ্বংসী সক্ষমতা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। আইএনএস বিরাট ভারতীয় নৌসেনার হয়ে গত তিন দশকে ৫ লক্ষ নটিক্যাল মাইলের বেশি যাত্রা করেছে। এ বছরের মার্চে ২৭ হাজার ৮০০ টনের এই সুবিশাল রণতরীকে বাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হবে, তা আগেই নির্ধারিত ছিল। তাই তোড়জোড়ও আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। আইএনএস বিরাটের ডেক থেকে উড়ত যে সি হ্যারিয়ার যুদ্ধবিমানগুলি, সেগুলিকেও অবসর দেওয়া হচ্ছে। ১১টি সি হ্যারিয়ার যুদ্ধবিমানকে নৌসেনার বিভিন্ন ঘাঁটিতে ‘মিউজিয়াম পিস’ হিসেবে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভারত-মার্কিন নৌ-মহড়ায় আইএনএস বিরাটের ডেক থেকে আকাশে ওড়া সি হ্যারিয়ার জেটগুলি পাল্লা দিচ্ছে মার্কিন যুদ্ধবিমানের সঙ্গে। নীচে আইএনএস বিরাট। ছবি: সংগৃহীত।
৬ মার্চ সূর্যাস্তের সময় শেষ বারের মতো এই ১৩ তলা সমান উঁচু রণতরীর মাথা থেকে নামিয়ে নেওয়া হবে দেশের জাতীয় পতাকা, নামিয়ে নেওয়া হবে নৌসেনার নিজস্ব ধ্বজা। তবে সেই অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে নৌসেনার প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা এবং অন্য উচ্চপদস্থ কর্তারা সে দিন আইএনএস বিরাটে হাজির হবেন। রয়্যাল নেভির বেশ কয়েকজন বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ কর্তাও ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: আমেরিকাকে টক্কর দিতে আরও এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার বানাচ্ছে চিন
আইএনএস বিরাটকে ডিকমিশনিং-এর পরে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব দিয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। সেই প্রস্তাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কোনও আপত্তিও ছিল না। কিন্তু এই সুবিশাল রণতরীকে মিউজিয়াম বা সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত করতে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা খরচ। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার তার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০০ কোটি টাকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের থেকে চেয়েছে। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রক টাকা দিতে নারাজ। সব রকমের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দিতে রাজি, খবর নৌসেনা সূত্রের। কিন্তু খরচের ভাগ দিতে মন্ত্রক প্রস্তুত নয়। ফলে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারও আর বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না। খুব দ্রুত যদি সিদ্ধান্ত না নেওয়া যায়, তা হলে আইএনএস বিরাটের ভাগ্যও আইএনএস বিক্রান্তের মতোই হতে পারে বলে নৌসেনা সূত্রে জানা যাচ্ছে।
ভারতীয় নৌসেনার প্রথম এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রান্ত-কে ডিকমিশন করার পর দীর্ঘ দিন ধরে সেটিকে মুম্বই বন্দরে রেখে দিয়েছিল নৌসেনা। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ওই রণতরীকে নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু কোনও পরিকল্পনাই শেষ পর্যন্ত রূপায়িত হয়নি। তাই ২০১৪ সালে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারটিকে ভেঙে ফেলা হয় এবং লোহা-লক্কড়ের দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আইএনএস বিরাটও কি সেই দিকেই এগোচ্ছে? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নৌসেনায়।