মূল্যবৃদ্ধিই কাঁটা এখন অর্থমন্ত্রী জেটলির

বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে ছাঁটতেই হবে ভর্তুকি। যে কারণে গতকাল পেট্রোল-ডিজেলের পর আজ (মঙ্গলবার) দাম বেড়েছে ভর্তুকিহীন গ্যাস সিলিন্ডার আর বিমান জ্বালানির। কিন্তু এই দর বাড়া উস্কে দিচ্ছে ফের এক দফা মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে। তা-ও এমন সময়ে, যখন আলু, পেঁয়াজের দামে রাশ টানতে নাজেহাল কেন্দ্র। শুধু তা-ই নয়, কর আদায়ের মাধ্যমে আয় তেমন বাড়ানো যাচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৫
Share:

বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে ছাঁটতেই হবে ভর্তুকি। যে কারণে গতকাল পেট্রোল-ডিজেলের পর আজ (মঙ্গলবার) দাম বেড়েছে ভর্তুকিহীন গ্যাস সিলিন্ডার আর বিমান জ্বালানির। কিন্তু এই দর বাড়া উস্কে দিচ্ছে ফের এক দফা মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে। তা-ও এমন সময়ে, যখন আলু, পেঁয়াজের দামে রাশ টানতে নাজেহাল কেন্দ্র। শুধু তা-ই নয়, কর আদায়ের মাধ্যমে আয় তেমন বাড়ানো যাচ্ছে না। অথচ খরচ লাগামছাড়া। দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে বেজায় চিন্তায় পড়তে হচ্ছে অর্থ মন্ত্রককে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চড়া দামের এই বাজারে সংসার চালাতে গরিব ও মধ্যবিত্তের কপালে যেমন চিন্তার ভাঁজ পড়ছে, তেমনই বাজেটের মুখে ভাঁড়ার সামলাতে রীতিমতো কসরত করতে হচ্ছে মোদী-সরকারকেও।

Advertisement

১০ জুলাই প্রথম বার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু তার আগে দেশের অর্থনীতির যে ছবির সামনে তিনি দাঁড়িয়ে, তা তাঁর রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো। পেঁয়াজ-সহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়ছে। এমনকী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে কেজিতে ১০০ টাকা ছুঁয়ে ফেলার রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে পেঁয়াজ। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম দু’মাসে রাজকোষ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২.৪ লক্ষ কোটি টাকায়। যা বাজেটের মোট হিসেবের ৪৫ শতাংশেরও বেশি। কর বাবদ আয় বেড়েছে মাত্র ৩.১%। যেখানে অন্তর্বর্তী বাজেটে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি ছিল যে, তা বাড়বে ১৯%। কর থেকে আয় যদি এতখানি কম হয়, তা হলে রাজকোষ ঘাটতিকে ৪.১% লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব হবে কী ভাবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। এই সবের মধ্যে কেন্দ্রের কাছে কিছুটা আশার আলো বাণিজ্য ঘাটতি এবং চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেন ঘাটতি বেশ কিছুটা নেমে আসা।

তাই হয়তো পরিস্থিতি বুঝেই জেটলি এ দিন স্বীকার করেন, রাজকোষ ঘাটতি আর মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানোই এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, মূল্যবৃদ্ধি না-কমলে গরিব-মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস উঠবে। সুদ কমাবে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সে ক্ষেত্রে আবার ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে শিল্পেরও। তার উপর রাজকোষ ঘাটতি বাড়ার দরুন কেন্দ্রকে বাড়তি ঋণ নিতে হলে তো কথাই নেই। তা ঘুরপথে ফের উস্কে দেবে সুদের হার ও মূল্যবৃদ্ধিকে।

Advertisement

কিন্তু এই অবস্থায় অর্থমন্ত্রী যে খাদ্যসামগ্রীর দাম কমার আশা করবেন, সেই সম্ভাবনাই বা তৈরি হচ্ছে কোথায়? ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহারাষ্ট্রে যে সব এলাকায় পেঁয়াজ চাষ হয়, সেখানে এপ্রিলে শিলা বৃষ্টি ও জুন মাসে কম বৃষ্টি হয়েছে। ফলে পেঁয়াজ সরবরাহ কমছে। দু’সপ্তাহের মধ্যে দাম ১০০ টাকা ছুঁতে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা। কেন্দ্রের মতে, এর পিছনে রয়েছে বেআইনি মজুতদারি ও ফাটকাবাজি। গত কালও প্রধানমন্ত্রীর কথামতো ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রকের সচিব কেশব দেশিরাজু সব রাজ্যকে ফাটকাবাজি ও মজুতদারি বন্ধের নির্দেশ দেন। এ নিয়ে ৪ জুলাই রাজ্যগুলির খাদ্য ও ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকেও বসবেন জেটলি এবং সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা।

পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তীসগঢ় ও দিল্লি কেন্দ্রের কাছে পেঁয়াজের মজুত নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ জারির অনুমতি চেয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, “পেঁয়াজ ১০০ টাকায় পৌঁছবে বলে অহেতুক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আলু, পেঁয়াজ, চাল, গম ইত্যাদির যথেষ্ট সরবরাহ আছে। কংগ্রেস মদতপুষ্ট মজুতদার ও ফাটকাবাজদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement