কোভ্যাক্সি নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
সব ঠিক থাকলে আগামিকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমেরিকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সেখানে তিনি প্রথমে কোয়াড দেশগুলির সঙ্গে বৈঠক ও পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন। এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ছাড়পত্র পায়নি ভারত বায়োটেকের করোনা প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন। মোদী কোভ্যাক্সিনই নিয়েছেন। ফলে আমেরিকার কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘টিকা না নেওয়া’ ব্যক্তি।
দেশে গত ১ মার্চ প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ শুরুর দিনেই দিল্লির এমস হাসপাতালে গিয়ে করোনার টিকা কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ় নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নেন দ্বিতীয় ডোজ়ও। হু-এর ছাড়াপত্র তো মেলেনি, আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইউএস এফডিএ) গত জুনে তাদের দেশে জরুরি ভিত্তিতে কোভ্যাক্সিন ব্যবহারের প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। স্বভাবতই কোভ্যাক্সিন নেওয়া কোনও ব্যক্তির টিকাকরণ হয়েছে বলে মান্যতা দিতে রাজি নয় আমেরিকা। ফলে মোদী বা তাঁর সঙ্গে সফরকারী দলের কেউ কোভ্যাক্সিন নিলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির টিকাকরণকে আমেরিকা বৈধ গণ্য করবে না। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, এ মাসের মধ্যে কোভ্যক্সিন ছাড়পত্র পেয়ে যাবে। কিন্তু হু-এর একটি সূত্রের মতে, কোভ্যাক্সিনের স্বীকৃতি সংক্রান্ত বৈঠকটি হবে আগামী ৫ অক্টোবর। অর্থাৎ তার আগে কোনও ভাবেই স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেকের তৈরি প্রতিষেধকটির।
তা হলে জো বাইডেনের দেশে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে কি বিচ্ছিন্নবাসে থাকতে হবে?
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, অতিমারির আবহে রাষ্ট্রনায়ক, মন্ত্রী ও আমলাদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় রয়েছে। স্বীকৃতিহীন টিকা নিলেও সরকারি কাজে বিদেশে যেতে পারেন তাঁরা। এমনকি, টিকার একটি ডোজ় নিয়েও তাঁদের বিদেশ সফর করায় ছাড় রয়েছে। আর কোভ্যাক্সিনের ছাড়পত্র নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ইতিমধ্যেই জমা দেওয়া হয়েছে। আশা, ৫ অক্টোবর হু-এর টিকাকরণ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে ছাড়পত্র পাওয়া যাবে। এ দিকে বিদেশ থেকে যারা আমেরিকায় যেতে চান তাঁদেরও টিকাকরণ সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করেছে বাইডেন প্রশাসন। বলা হয়েছে, কোনও ভারতীয় যদি হু-এর স্বীকৃত কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ় নিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর আমেরিকা প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। নতুন ওই নিয়ম চালু হবে নভেম্বরে।
আমেরিকা যেমন অনুমতি দিচ্ছে, তেমনই কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ় নেওয়া ভারতীয়দের বিনা বাধায় ব্রিটেনে যেতে দেওয়া হোক— আজ এই মর্মে ব্রিটেনের বিদেশ সচিব এলিজা়বেথ ট্রুসকে ‘কড়া ভাবে’ অনুরোধ জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা উপলক্ষে দুই কর্তাই এখন নিউ ইয়র্কে। সেখানে আজ এমন পরিস্থিতিতে বৈঠক হল জয়শঙ্কর এবং এলিজ়াবেথের, যখন কোভিড প্রতিষেধকের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দ্বিপাক্ষিক অস্বস্তি বাড়ছে।
কোভিডের প্রথম পর্বে ভারত কোভিশিল্ড পাঠিয়েছিল ব্রিটেনকে। এখন সেই অক্সফোর্ড ও পুণের সিরাম সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তৈরি টিকাকে স্বীকৃত প্রতিষেধকের মান্যতা দিতে নারাজ বরিস জনসনের সরকার। ব্রিটেনে প্রবেশের নতুন নিয়মে শর্ত— ভারতে যাঁরা কোভিশিল্ড নিয়েছেন, তাঁদের ওই দেশে পৌঁছনোর পর ১০ দিন বাধ্যতামূলক ভাবে বিচ্ছিন্নবাসে যেতে হবে। ওই ব্যক্তিদের টিকাকরণ হয়নি বলেই ধরে নেবে ব্রিটেন।
আজ নিউ ইয়র্কে এলিজ়াবেথের সঙ্গে বৈঠকের পর জয়শঙ্করের টুইট, ‘উভয় দেশের স্বার্থে বিচ্ছিন্নবাস সংক্রান্ত বিষয়টির দ্রুত সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছি’। পরে দিল্লিতে বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘‘কোভিশিল্ড তো ব্রিটেনের লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষেধক। অক্সফোর্ডের প্রযুক্তিতে ভারতে উৎপাদিত টিকা। আমরা ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ কোভিশিল্ড ব্রিটেনে পাঠিয়েছি। ফলে এখন তারা যে নীতি নিয়েছে তা বৈষম্যমূলক।’’ তিনি জানান, এর ফলে সে দেশে কর্মক্ষেত্রে বা পড়াশোনা করতে যাওয়া ভারতীয়েরা অসুবিধায় পড়েছেন। ব্রিটেন আশ্বাস দিয়েছে, এ ব্যাপারে সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছনো যাবে।