আই এন এস অরিহন্ত
নিঃশব্দে কাজে নেমে পড়েছে ভারতের একমাত্র পরমাণু বিদ্যুৎ চালিত ডুবোজাহাজ আইএনএস অরিহন্ত। কিন্তু তাতেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না নৌসেনার কর্তারা।
পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে যখন ভারতের উত্তেজনা তুঙ্গে, সেই সময় নৌসেনা কর্তারা মনে করছেন, তাঁদের হাতে এখন ডুবোজাহাজের যে সম্ভার হয়েছে, তাতে পাকিস্তান-চিনের সঙ্গে এঁটে ওঠা মুশকিল। এই দুই দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতেই ছ’টি ফরাসি স্করপেন ডুবোজাহাজের বরাত দিয়েছিল নৌসেনা। প্রথমটির নৌসেনায় যোগ দেওয়ার কথা চলতি বছরের শেষে। কিন্তু তার আগেই, অগস্ট মাসে এই ডুবোজাহাজের যাবতীয় রহস্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছিল একটি অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্র। ফলে ওই ডুবোজাহাজের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
আইএনএস অরিহন্ত ও স্করপেন-ডুবোজাহাজ আইএনএস কালভরি হাতে এলেও দেশের নৌসেনার ডুবোজাহাজের সম্ভার একেবারেই আহামরি নয়। নৌসেনা সূত্রের বক্তব্য, বাহিনীর হাতে মাত্র ১৩টি সাবেকি ডুবোজাহাজ রয়েছে। যার অধিকাংশই জরাগ্রস্ত। রাশিয়ার থেকে ধারে একটি পরমাণু চালিত ডুবোজাহাজ, আইএনএস চক্র নিয়ে কাজ সামাল দেওয়া হচ্ছে। সেই তুলনায় চিনের হাতে রয়েছে পাঁচটি পরমাণু চালিত ডুবোজাহাজ এবং ৫১টি ডুবোজাহাজ। তার সঙ্গে আরও ৭ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সম্পন্ন পাঁচটি ডুবোজাহাজ কিনছে চিনের নৌসেনা। খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ৫টি ডুবোজাহাজ।
এই পরিস্থিতিতে আজ নৌসেনার যুদ্ধজাহাজ তৈরি ও কেনার দায়িত্বে থাকা ভাইস অ্যাডমিরাল জি এস পাব্বি দেশের শিল্পমহলের কাছে এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন। শিল্পমহল, বণিকসভার সঙ্গে এক আলোচনায় পাব্বি বলেন, নৌসেনা ও শিল্পমহল মিলে দেশেই ডুবোজাহাজ তৈরির পথে হাঁটার এটাই উপযুক্ত সময়। শিল্পমহলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পি-৭৫আই প্রকল্পে ছ’টি ডুবোজাহাজ তৈরির বরাত খুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য। যদিও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পি৭৫আই প্রকল্প নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা চলছে।
পরমাণু চালিত ডুবোজাহাজ অরিহন্ত এখন কাজ শুরু করলেও তা নিয়ে টালবাহানা কম হয়নি। নব্বইয়ের দশকে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তার শুরুর পর অবশেষে এই ধরনের তিনটি ডুবোজাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। অরিহন্ত প্রথম জলে নামে ২০০৯ সালে। ২০১৪-র শেষ থেকে সমুদ্রে মহড়া শুরু হয়। ৬ হাজার টনের এই ডুবোজাহাজ থেকে পরমাণু বোমা সম্বলিত দূরনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া সম্ভব। পরমাণু বিদ্যুৎ চালিত বলে দীর্ঘসময়, টানা কয়েক মাস এই ডুবোজাহাজ জলের তলায় থাকতে পারে। ফলে এর হদিশ পাওয়াও যথেষ্ট কঠিন। নৌসেনার একটি সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, ডুবোজাহাজের ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র এখনও পুরোপুরি তৈরি নয়। তবে এর মধ্যে দ্বিতীয় পরমাণু ডুবোজাহাজ, আইএনএস অরিধমান তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। দু’বছরের মধ্যেই তা নৌসেনা হাতে পেতে পারে।