ছবি: পিটিআই।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের আপৎকালীন বৈঠকে আজ আফগানিস্তানের নাম করে সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। জানালেন, কাবুলের ঘটনায় ভারতের সীমান্তে ‘সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য’ আরও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি তালিবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার প্রশ্নে জানালেন, “কাবুলের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তালিবান ও তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে কাবুল। ফলে বিষয়টি এখন সেখান থেকেই দেখা উচিত।”
তালিবানের সঙ্গে ভারত আলোচনার দরজা খুলছে কি না, এই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে কূটনৈতিক শিবিরে। বিষয়টি খোলসা না করলেও সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-ঘনিষ্ঠ আফগান নেতাদের (হামিদ কারজ়াই, আবদুল্লা আবদুল্লা) মাধ্যমে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দের কথা জানিয়েছে দিল্লি। এ ছাড়া ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপদে দেশ ফিরিয়ে আনার জন্যও দর কষাকষি করতে হয়েছে তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে যে ভাবে সন্ত্রাস-বিরোধী অবস্থান নিয়ে চলছে ভারত, তা বহাল রাখা হবে। সীমান্তে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। কিন্তু রাজনৈতিক স্তরে আফগানিস্তানের গদিতে তালিবান বসলে, তাদের সঙ্গে বকেয়া দ্বিপাক্ষিক কাজও শুরু করা হবে। আফগানিস্তানে ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলার। তালিবান আফগানিস্তান দখল করার সময় থেকেই বাণিজ্য ক্ষেত্রে কার্যত অচলাবস্থা চলছে সে দেশে। গত দশ দিন সব স্তব্ধ। গত কাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন-এর কর্তা অজয় সহাই সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, “আমরা আফগানিস্তানের ট্রানজিট রুটের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চালাই। কিন্তু এখন আমদানি রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টি সাময়িক। এখনও সে দেশে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি, সরকার নেই। সরকার গঠন হলে সবার আগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনীতিতে নজর দিতে বাধ্য হবে তালিবান। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বন্দর শহর এবং পাকিস্তান সীমান্ত যেমন তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তেমনই ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগের মুখাপেক্ষী হওয়াটাও স্বাভাবিক নতুন সরকারের কাছে। এমনকি সে সরকার যদি মেশিনগানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে, তবুও।
তালিবান কাবুল দখলের পরে নিরাপত্তা পরিষদে সন্ত্রাস-বিরোধিতার বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। সূত্রের খবর, আজও নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে উপস্থিত বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, আল কায়দা, লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ, হক্কানি নেটওয়ার্ক-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে এবং নাশকতা ছড়ানোর জন্য নিত্য নতুন জায়গা তৈরি করছে। রাষ্ট্রের সমর্থনও আগের তুলনায় বেশি পাচ্ছে জঙ্গিরা। বিদেশমন্ত্রী আজকের বৈঠকে ২০০৮-এর মুম্বই হামলা, ২০১৬-র পঠানকোটের হামলা এবং ২০১৯-এর পুলওয়ামা হামলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। কোভিডের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের তুলনা টেনে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “অতিমারির সঙ্গে মিল রয়েছে বিষয়টির— আমরা সকলে নিরাপদ না হলে কেউই কিন্তু নিরাপদ নই।” আফগানিস্তানের ঘটনা যে ভারতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের, এ কথা জানিয়ে বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য— ভারতের সীমান্তে সন্ত্রাসবাদের নিরাপদ স্বর্গরাজ্য গড়ে উঠেছে। পাকিস্তানের উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, “তারা সন্ত্রাসবাদীদের আতিথ্য দেবে, আবার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বক্তৃতাও দেবে— এই দু’মুখো কাজকর্ম বন্ধ হওয়া দরকার।”
প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিন্হা মনে করেন, তালিবানের বিষয়ে খোলা মন নিয়ে এগোনো উচিত ভারতের। দূতাবাস খোলা রেখে রাষ্ট্রদূতকে আবার সে দেশে ফেরত পাঠানোও উচিত।