বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি। ছবি: সংগৃহীত।
আগামী সোমবার এক দিনের জন্য ঢাকায় যাচ্ছেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। ভারত-বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রক পর্যায়ের আলোচনায় (ফরেন অফিস কনসালটেশন সংক্ষেপে এফওসি) যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি। এফওসি ভারত-বাংলাদেশের একটি ব্যবস্থা, যেখানে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যালোচনা হয়।
কূটনৈতিক মহলের মতে, এ বারের সফরের তাৎপর্যই আলাদা। অন্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা অবশ্যই হবে। কিন্তু সাউথ ব্লকের তরফে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, সে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাকে। আজ বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু বৈঠক করবেন বিক্রম। মন্ত্রক স্পষ্ট না করলেও, জানা গিয়েছে তিনি দেখা করতে পারেন সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে।
সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়াল আজ বলেন, “বিদেশ মন্ত্রক পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিতে বিদেশসচিবের বাংলাদেশ যাওয়ার দিন নির্দিষ্ট হয়েছে ৯ ডিসেম্বর। এটা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনার ক্ষেত্রে কাঠামোগত ব্যবস্থার অন্তর্গত।” বাংলাদেশে সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি এবং সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের ঘটনায় দু’দেশের টানাপড়েন অব্যাহত। এই আবহে বিদেশসচিবের সফরকে কী ভাবে দেখছে নয়াদিল্লি?রণধীরের কথায়, “আমাদের আশা, চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ বিচার হবে। তাঁর আইনি অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।’’ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর বাংলাদেশে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ-সহ বিভিন্ন ধর্মের সংখ্যালঘুদের উপর মুসলিম কট্টরপন্থীরা ধারাবাহিক হামলা করছে, যা ‘আজগুবি মিডিয়া রিপোর্ট’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার ভিতরে এবং বাইরে দাবি তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করা উচিত কেন্দ্রের। কারণ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে। বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, বিক্রমের সফরের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছ থেকে সাউথ ব্লক তথ্য নিচ্ছে। সীমান্তের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসার প্রয়োজন নেই।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে সব রকম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চালু রেখেছে নয়াদিল্লি। মন্ত্রকের এক কর্তা আজ বলেছেন, “বৈঠকে বাংলাদেশকে জানাব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের। সেটা আগে করা হোক। তা না হলে কূটনৈতিক দৌত্য অর্থহীন। আমাদের মধ্যে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, নদী সংক্রান্ত বহু বিষয় রয়েছে। সেগুলি যেমন চলার চলছে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে সে দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে।” এ কথাও বলা হচ্ছে, সে দেশের যুবাশক্তির সমস্যা হয় এমন পদক্ষেপ ভারত করবে না। কারণ, তা হলে ‘কুড়ি বছর পিছিয়ে’ যেতে হবে।