ভারতের বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে আগামী কাল, সোমবার বসছে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপের (এনএসজি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে সেই বৈঠকের ঠিক আগে আবার চিন সফরে ভারতীয় কূটনীতিক। বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর দু’দিন কাটিয়ে এলেন বেজিং-এ। চিনা বিদেশ সচিবের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করলেন ভারতের অন্তর্ভুক্তির ইস্যু নিয়ে। শেষ পর্যন্ত চিন ভারতের এনএসজি-ভুক্তির প্রস্তাব সমর্থন করবে কি না স্পষ্ট নয়। কিন্তু কাউকে প্রায় কিছুই জানতে না দিয়ে ভারতীয় বিদেশ সচিবের বেজিং সফর নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
গোটা বিশ্বে পরমাণু বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে যে ৪৮টি দেশের সংগঠন, সেই এনএসজি-তে ভারতকে অবশ্যই দরকার— মত আমেরিকার। নয়াদিল্লির হয়ে ওয়াশিংটন জোর কদমে ময়দানে নেমেও পড়েছে। মেক্সিকো, সুইৎজারল্যান্ড-সহ যে দেশগুলি ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করছিল, তারাও এখন ভারতের পক্ষে। শুধু চিন অনড়। চিনকে রাজি করাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ইতিমধ্যে বেজিং সফর সেরে এসেছেন। ভিয়েনায় এনএসজি বৈঠক হওয়ার আগেই রাষ্ট্রপতি চিনে যান। বিদেশ মন্ত্রী হিসেবে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকায় এবং আন্তর্জাতিক মহলে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি থাকা ভারতীয় রাজনীতিকদের অন্যতম হওয়ায় প্রণববাবুই চিনের সঙ্গে আলোচনা করতে যাবেন বলে স্থির হয়। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বেজিং সফরে চিন নিজের অবস্থান থেকে সরেনি ঠিকই। কিন্তু ভারত-বিরোধিতার সুর কিছুটা হলেও নরম করেছে। এনএসজি সদস্যরা সোলে বৈঠকে বসার আগে ফের চিনের সঙ্গে একদফা আলোচনা সেরে নিল ভারত।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর ১৬ ও ১৭ জুন ভারতের বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর বেজিং সফরে ছিলেন। চিনের বিদেশ সচিবের সঙ্গে তিনি সবিস্তার আলোচনা করেছেন। এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবে চিন যাতে বাধা না দেয়, এস জয়শঙ্কর দু’দিনের বেজিং সফরে সেই চেষ্টাই করেছেন।
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি বা এনপিটি সই না করা পর্যন্ত ভারতকে এনএসজি-তে ঢুকতে দেওয়া উচিত নয় বলে চিন অনেক দিন ধরেই সরব। যদি এনপিটি সই না করে ভারত এনএসজি-তে ঢোকে, তা হলে পাকিস্তানকেও এনএসজি সদস্যপদ দিতে হবে বলে বেজিং দাবি করেছে। এনএসজি সদস্য দেশগুলি যে সব সুবিধা ভোগ করে, ভারত সদস্য না হয়েও তার অনেকগুলিই ভোগ করে। ২০০৮ সালে ভারত-আমেরিকা অসামরিক পরমাণু চুক্তিকে সবুজ সঙ্কেত দিতে ভারতের জন্য বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছিল এনএসজি। পাকিস্তান সে সব সুবিধা পায় না। চিনের বক্তব্য, এর পর যদি ভারতকে সরাসরি এনএসজি-র সদস্য করে নেওয়া হয়, তা হলে পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায় এই মন্দির!
ভারতীয় বিদেশ সচিবের আচমকা এবং প্রায় নীরব বেজিং সফরও কিন্তু পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কোনও আগাম ঘোষণা ছাড়া এবং গণমাধ্যমকে সে ভাবে না জানিয়েই এস জয়শঙ্কর বেজিং গিয়েছিলেন। তিনি বেজিং থেকে ফেরার আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহল তো বটেই, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও সে ভাবে জানতে পারেনি এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের কথা। সোলে যে দিন বৈঠকে বসছে ৪৮টি দেশ, তার আগের দিন প্রকাশ্যে এল এই খবর। জয়শঙ্করের এই বেজিং সফরকে তাই একটু অন্য চোখে দেখতে শুরু করেছে কূটনৈতিক মহল। পাক প্রধানমন্ত্রী বিদেশনীতি সংক্রান্ত উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ এনএসজি-র বিভিন্ন সদস্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ বেশ কয়েকটি দেশে ফোন করে সরতাজ দরবার করেছেন বলে খবর। ইসলামাবাদ যেন বৈষম্যের শিকার না হয়, সরতাজ আজিজ বার বার সে কথাই বলছেন বিভিন্ন দেশে ফোন করে।