ফাইল চিত্র।
ভারতের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া ‘নেতিবাচক ভাষ্য’ বদলাতে মোদী সরকার এ বার আমেরিকায় পাঠরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কাজে লাগাতে চায়। এ ব্যাপারে একটি নতুন শাখা তৈরি করেছে আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতীয় দূতবাস।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এমনটা ভারতের বিদেশনীতির প্রশ্নে অভূতপূর্ব। চিন বরাবরই ভাবমূর্তি তৈরির জন্য বিদেশে পাঠরত দেশীয় ছাত্রদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত করে থাকে। বেজিং সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধুদ্ধ করা হয় সরকারি স্তর থেকেই। কিন্তু ভারতে এই ধরনের পদক্ষেপ এর আগে বড় একটা দেখা যায়নি বলেই মনে করছে কূটনীতির জগতের লোকজন।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল পরিস্থিতির জেরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সমোলাচিত হয়েছে মোদী সরকার। অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, আমেরিকার বেশ কিছু প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম কোভিড-বিপর্যয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দায়ী করে সরব হয়েছে। আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ সম্প্রতি তাদের সম্পাদকীয়তে মোদী সরকারের ভূমিকাকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছে।
সব মিলিয়ে ঘুম উড়ে গিয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের— এমনটাই মনে করছে রাজনীতির মানুষজন। বিদেশের মাটিতে ভারতের তথা প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি তৈরির প্রধান দায়িত্ব এই মন্ত্রকেরই। সূত্রের খবর, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেছেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে। ভারত তথা প্রধানমন্ত্রীর মোদীর ভাবমূর্তি সম্পর্কে ইতিবাচক প্রচার করা এবং কোভিড মোকাবিলায় তাঁর সরকার কী ভাবে কোমর বেঁধে কাজ করছে— সে কথা সংশ্লিষ্ট দেশগুলির বিভিন্ন স্তরে তুলে ধরাই এখন সাউথ ব্লকের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। তারই সূত্রে আমেরিকায় পাঠরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদেরও এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে খবর।
সেখানকার ভারতীয় ছাত্রদের জন্য ভারতের দূতাবাস একটি ‘হাব’ তৈরি করেছে। সেখানে তাঁদের তিনটি বিষয়ে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। পরিবেশ দূষণ রুখতে পদক্ষেপ এবং তৃণমূল স্তরের পঠনপাঠনের পাশাপাশি রাখা হয়েছে ‘সংবাদমাধ্যম এবং ভারত’ শীর্ষক একটি বিষয়। সেখানে বলা হয়েছে, যাঁরা খবরের পোকা, তাঁরা যদি ভারতকে আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকা বা সামাজিক মাধ্যমে যে ভাবে দেখানো হয়, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন, তা হলে সেইসব নেতিবাচক ভাষ্যকে বদলানোর জন্য এগিয়ে আসতে পারেন, ভূমিকা নিতে পারেন।
বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন শিবসেনার রাজ্যসভার নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী। তিনি ভারতীয় দুতাবাসের ওয়েবসাইটের এই নতুন ঘোষণাটি তুলে ধরে টুইট করেছেন। সেখানে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিংহ সান্ধুকে তিনি কিছুটা তির্যক ভাবে প্রশ্ন করেছেন, “তা হলে কি ভারতীয় দূতাবাস এ বার আমেরিকায় পাঠরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের ডাকবে সরকারকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য?”