যামিনী কৃষ্ণমূর্তি।
তাঁর নিজের শিল্পী সত্তার নির্মাণ পর্ব এবং সদ্য স্বাধীন ভারতের নিজেকে চেনার তাগিদ— যেন অদ্ভুত ভাবে মিলে গিয়েছিল। দেড় দশক আগের একটি তথ্যচিত্রে নিজের শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প এ ভাবেই শুনিয়েছিলেন যামিনী কৃষ্ণমূর্তি। অচিরেই ভরতনাট্যম বা কুচিপুড়ির নৃত্যকলায় সারা বিশ্বে ভারতের কোমল শক্তির (সফট পাওয়ার) এক মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠেন যামিনী। শনিবার বিকেলে দিল্লির হাসপাতালে সেই ছন্দোময় অধ্যায়টিতে যবনিকাপাত ঘটল। বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। বছরখানেক ধরেই বার বার হাসপাতালে আসা-যাওয়া চলছিলই। অবিবাহিতা শিল্পীর দুই বোন রয়েছেন। আর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে সন্তানপ্রতিম শিষ্যশিষ্যারা।
তিরুপতি তিরুমালার মতো ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে এ কালে মাত্র দু’জনকে ‘আবাসিক শিল্পী’র সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন কর্নাটকি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কণ্ঠশিল্পী এমএস সুব্বুলক্ষ্মী এবং যামিনী। মাত্র ২৮ বছর বয়সে পদ্মশ্রী শিরোপার পরে যামিনী ধাপে ধাপে পদ্মবিভূষণও হয়েছেন। ভরতনাট্যম, কুচিপুডি ছাড়াও ওড়িশি নৃত্যকলা, কর্নাটকি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বীণাবাদনেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। যামিনী বলতেন, “আমি প্রতিভা মানি না। তবে জীবনের পূর্ব নির্দিষ্ট লক্ষ্য চিনতে পারায় বিশ্বাস করি।” ভরতনাট্যম জানতে প্রাচীন ভারতীয় পুরাণ, শাস্ত্রজ্ঞান জানা ভাল এটা তিনি মানতেন। কিন্তু বলতেন, “নিছকই ঈশ্বর বিশ্বাস নয়, নান্দনিক চেতনার অনুভবটাই আসল।”
ঠাকুরদা উর্দু ভাষার কবি, বাবা সংস্কৃত সাহিত্য বিশারদ। তাঁদের কন্যা নাচ-অন্ত-প্রাণ। জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশের মদনপল্লিতে। তবে ভরতনাট্যম শিক্ষার জন্যই বাবা নিয়ে যান চেন্নাইয়ের কলাক্ষেত্রে। যামিনীর শিক্ষা অবশ্য কোনও একজন গুরুর সান্নিধ্যেই পূর্ণ হয়নি। তাঁর শিল্পী-জীবন যেন যুগযুগান্তরের স্তন্য পান করেই পরিপুষ্ট। বিশ্ব নাচের কেন্দ্রে ছন্দের অনুভব জীবনের শেষ পর্যন্তই ছেড়ে যায়নি যামিনীকে। এক শিষ্যা বলেছেন, মাসখানেক আগে নিঃসাড়ে রোগশয্যায় পড়ে থাকার সময়ে গুরুমাতাকে আকর্ষিত করতে তিনি পাশে নাচতে শুরু করলে যামিনী কিছু ক্ষণের জন্য চোখ খুলেছিলেন। মুখে খেলেছিল দিব্য বিভাময় হাসি। আজ, রবিবার শিল্পীর দেহ দিল্লির হাউস খাসে তাঁর নিজের নামাঙ্কিত নৃত্যশিক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।