এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া।
লম্বা অপেক্ষা নয়, ‘চুন-চুনকর’ হিসেব নেওয়াই তাঁর স্বভাব বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বালাকোট অভিযানে নিহতের হিসেব এখনও দেননি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী চুপ। বায়ুসেনা বলছে, নিহত জঙ্গির হিসেব গোনা তাদের কাজ নয়।
তা হলে বিজেপি সভাপতি সংখ্যাটা জানাচ্ছেন কী করে?
গত কালই গুজরাতে গিয়ে অমিত শাহ ঘোষণা করলেন, বায়ুসেনার অভিযানে মারা গিয়েছে আড়াইশোর বেশি জঙ্গি। এই বিবৃতির চব্বিশ ঘণ্টা পরেও সরকারের তরফে কেউ জানাননি, সংখ্যাটি ঠিক না ভুল। আজ বায়ুসেনা প্রধান বি এস ধানোয়া শুধু বলেছেন, তাঁরা লক্ষ্যভেদ করেছেন। কত জঙ্গি নিহত হয়েছে? জবাবে বায়ুসেনা প্রধান জানান, সেটা গোনা তাঁদের কাজ নয়, সরকারের কাজ।
কিন্তু সরকার তো গোড়া থেকেই চুপ। প্রথম দিন অসমর্থিত ‘সেনা সূত্র’ থেকে ৩০০ জঙ্গির মৃত্যুর খবর ছড়িয়েছিল। কিন্তু রাতেই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলে দেন, নিহতের সংখ্যা নিয়ে সরকার কিছু বলছে না। মাঝের ক’দিন নানা মুনির নানা মত শোনা গিয়েছে। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এস এস অহলুওয়ালিয়া বলে বসেন, জঙ্গি মারা নয়, পাকিস্তানকে বার্তা দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল। সেটা দেওয়া গিয়েছে। নিজের যুক্তির সমর্থনেই তিনি বলতে থাকেন, ‘‘সরকার কি নিহতের সংখ্যা বলেছে? অমিত শাহ কি নিহতের সংখ্যা বলেছেন?’’
আরও পড়ুন: সুখোইয়ের ক্ষেপণাস্ত্রে ধ্বংস পাক ড্রোন, অভিযান চলবে বলে জানালেন বায়ুসেনা-প্রধান
এর পরেই গত কাল সেই অমিত শাহ মুখ খুললেন এবং ২৫০ জঙ্গি নিহত বলে দাবি করলেন। কংগ্রেস আজ প্রশ্ন তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী কিছু জানাচ্ছেন না। প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অভিযানের সিদ্ধান্তে শরিক করা হয়নি। অমিত শাহ কোথা থেকে নিহত জঙ্গির সংখ্যা জানতে পারলেন? তিনি তো সরকারের কেউ নন! নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার সদস্যও নন। তা হলে সরকারের কে তাঁকে জানালেন? আর কোন এক্তিয়ারেই বা জানালেন?
আরও পড়ুন: কোচিকে করাচি, মুখ ফস্কে বলেও সামলে নিলেন মোদী
সরকারের ভিতর থেকে আজ উঠে এসেছে আরও একটি ‘সূত্র’। আর সেই ‘সূত্র’ অমিত শাহের দাবিকে ‘সত্য’ প্রমাণ করতে জানাল, বালাকোটে জইশের ঘাঁটিতে ফোনে আড়ি পাতছিল দেশের প্রযুক্তিনির্ভর গোয়েন্দা সংস্থা ‘এনটিআরও’। তারা সেই ঘাঁটি থেকে তিনশোর মতো সক্রিয় মোবাইল ফোনের হদিস পেয়েছে। ভারতের গুপ্তচর সংস্থা র’-ও একই খবর জানিয়েছিল।
কংগ্রেসের পি চিদম্বরম আজ বলেন, ‘‘বায়ুসেনা নিহত জঙ্গির সংখ্যা জানাচ্ছে না। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতেও নেই। কে তা হলে এই জঙ্গির সংখ্যা গুনল কে সংখ্যা জানাচ্ছেন? গর্বিত নাগরিক হিসেবে সরকারকে বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু গোটা বিশ্বও যাতে বিশ্বাস করে, তার জন্য শুধু বিরোধীদের আক্রমণ না করে সরকারকে কোনও জুৎসই পদক্ষেপ করতে হবে।’’
অামদাবাদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে ঘোষণা করেছেন, ‘‘এ বার ঘরে (পাকিস্তানের?) ঢুকে মারের পালা।’’ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বালাকোটেও তো ঘরে ঢুকে মারা হয়েছে বলেই জানানো হয়েছে। তা হলে নতুন করে ‘এ বার’ কেন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা কপিল সিব্বলের মতো নেতাদের বক্তব্য, হামলায় কী হয়েছে, তা দেশবাসীর জানার অধিকার আছে। দিগ্বিজয় সিংহ প্রমাণ দেওয়ার কথাও তুলেছেন। কংগ্রেসের বক্তব্য, ‘‘আমরা তো সেনাকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলছি না। নানা ‘সূত্র’ দিয়ে যে ভাবে বলা হচ্ছে, ৩৫০-৪০০ জঙ্গি মারা গিয়েছে আর তা নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করে চলেছে, আমাদের আপত্তি তা নিয়েই।’’