সাগরে বেপাত্তা বায়ুসেনার বিমান, ২৯ আরোহীর খোঁজে তল্লাশি

বঙ্গোপসাগরের আকাশ থেকে হারিয়ে গেল ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান। দুই পাইলট-সহ মোট ২৯ জন যাত্রী ছিলেন বিমানটিতে। তাঁদের কেউ বায়ুসেনা, কেউ সেনাবাহিনী, কেউ নৌবাহিনী, কেউ উপকূলরক্ষী বাহিনীর অফিসার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

এক টানা প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ওড়ার মতো জ্বালানি ছিল বিমানটিতে।

বঙ্গোপসাগরের আকাশ থেকে হারিয়ে গেল ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান। দুই পাইলট-সহ মোট ২৯ জন যাত্রী ছিলেন বিমানটিতে। তাঁদের কেউ বায়ুসেনা, কেউ সেনাবাহিনী, কেউ নৌবাহিনী, কেউ উপকূলরক্ষী বাহিনীর অফিসার। ছিলেন সেনা-আত্মীয় অসামরিক ব্যক্তিও।

Advertisement

বায়ুসেনা সূত্রের খবর, কোয়ম্বত্তূরের সুলুর স্কোয়াড্রনের অধীনে থাকা এএন-৩২ বিমানটি শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় চেন্নাইয়ে বায়ুসেনার ঘাঁটি তাম্বরম থেকে আকাশে ওড়ে। চালক ফ্লাইট লেফ্টেন্যান্ট ভদসারা, সহকারী চালক নন্দাল এবং নেভিগেটর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কুণালের উড়ান-টিমের সঙ্গে প্রথম থেকেই যোগাযোগ ছিল চেন্নাই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর। সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে শেষ বার এটিসি-র সঙ্গে কথা হয় চালকের। সকাল ৯টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত চেন্নাই এটিসি-র রেডারে বিমানটিকে দেখা গিয়েছে। এটিসির নথি অনুযায়ী, সে সময় বিমানটি বঙ্গোপসাগরের উপর চেন্নাইয়ের পূর্ব দিকে ০৯৯ ডিগ্রি/১৫১ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ২৮০ কিলোমিটার) দূরত্বে ছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তার উচ্চতা ছিল ২৩ হাজার ফুট। আচমকা বাঁ দিকে মুখ ঘুরিয়ে বিমানটি অতি দ্রুত নীচে নামতে থাকে। এর পরেই আচমকা তার সঙ্গে এটিসি-র সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে পাইলটের তরফ থেকে কোনও বিপদ সঙ্কেত (মে-ডে কল) মেলেনি।

খবর আসে কলকাতার এটিসি-র কাছে। কারণ, ভৌগোলিক ভাবে বঙ্গোপসাগরের বেশির ভাগ আকাশ নিয়ন্ত্রণ করে কলকাতার এটিসি। ওই হারিয়ে যাওয়া বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দিষ্ট যে কম্পাঙ্ক, তা বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া অন্যান্য বিমানকে জানিয়ে দেন কলকাতা এটিসি-র অফিসারেরা। তাঁদের বলা হয়, হারিয়ে যাওয়া বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে। কলকাতা এটিসি সেই চেষ্টা করলেও হারিয়ে যাওয়া বিমানটির কোনও খোঁজ মেলেনি।

Advertisement

সকাল সাড়ে এগারোটায় পোর্ট ব্লেয়ারে বিমানটি নামার কথা ছিল। জানা গিয়েছে, এক টানা প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ওড়ার মতো জ্বালানি ছিল বিমানটিতে। অনেক সময় বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দেরি হতে পারে বলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু বারোটা বাজার পরেও বিমানটি পোর্ট ব্লেয়ারে না নামায় আশঙ্কা বাড়তে শুরু করে। কারণ জ্বালানির হিসেব মতো বেলা একটার পরে বিমানটি আর কোনও ভাবেই আকাশে থাকতে পারে না। একবার ভাবা হয়েছিল, চেন্নাই এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দিক ভুল করে মুখ ঘুরিয়ে কলম্বো চলে যেতে পারে বিমানটি। কিন্তু সেখান থেকেও কোনও খবর আসেনি। তার পরে আর দেরি না করে তল্লাশি অভিযান শুরু করা হয়।

সমুদ্রের যে জায়গা থেকে বিমানটি হারিয়ে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে, সেই এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালাতে নৌবাহিনীর ১৩টি যুদ্ধজাহাজকে পাঠানো হয়। টহল দেয় নৌসেনার পি-৮আই এবং ডর্নিয়ের ও বায়ুসেনার সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস এবং এএন-৩২ এই চারটি বিমান। তার মধ্যে সুপার হারকিউলিস বিমানের নিজস্ব রেডার আছে। ফলে ওই এলাকায় কোনও বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে সঙ্কেত এলে তা ধরা পড়ার কথা সেই রেডারে। কিন্তু তাতেও কিছু মেলেনি। জলের তলায় কিছু মেলে কি না, তা দেখতে পাঠানো হয় একটি ডুবোজাহাজও। উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দেন তিন বাহিনীর শীর্ষ অফিসারেরা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর টুইটারে বলেন, ‘‘বায়ুসেনার এএন-৩২ বিমানটি এবং বাহিনীর সবাইকে খোঁজার সব রকম চেষ্টা চলছে।’’

বায়ুসেনা সূত্রের খবর, বিমানটি সপ্তাহে তিন দিন চেন্নাই থেকে পোর্ট ব্লেয়ার হয়ে কার নিকোবর পর্যন্ত যাতায়াত করে। মূলত প্রয়োজনীয় রসদ এবং বাহিনীর কর্মী-অফিসার এবং তাঁদের পরিবার যাতায়াত করেন এতে। এ দিনও বিমানে থাকা ২৯ জনের মধ্যে ৮ জন ছিলেন অফিসার-কর্মীদের আত্মীয়। বায়ুসেনার এক মহিলা অফিসারও ছিলেন।

গত বছর টহলদারিতে বেরিয়ে চেন্নাই উপকূলের কাছেই বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ হয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি ডর্নিয়ের বিমান। প্রায় সপ্তাহ তিনেক তল্লাশির পরে সাগরের তলায় বিমানটির ভগ্নাবশেষ এবং কর্মী-অফিসারদের দেহ মিলেছিল। উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি সূত্রের আশঙ্কা, এই নিখোঁজ বিমানটির পরিণতি হয়তো খারাপ কিছু হয়েছে। ওই এলাকায় সমুদ্র এত অশান্ত যে জলপথে তল্লাশি চালাতে সমস্যার কথাও জানানো হয়েছে।

মাঝ আকাশ থেকে বিমান হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। মাত্র বছর আড়াই আগে, ২০১৪-র ৮ মার্চ দক্ষিণ চিন সাগরের উপর থেকে মাঝ রাতে আচমকাই হারিয়ে যায় মালয়েশিয়া বিমানসংস্থার উড়ান এমএইচ ৩৭০। ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন বিমানকর্মী নিয়ে বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং যাচ্ছিল। আজ পর্যন্ত সেই বিমানের হদিস মেলেনি। টানা ২ বছরের বেশি সময় তল্লাশি চালানোর পরে এখন তা বন্ধ করার কথাও বলা হচ্ছে। সেই যাত্রীদের পরিণতি কী হয়েছিল, তা আজও জানা যায়নি। শুক্রবার সকালে বঙ্গোপসাগরের উপর থেকে বায়ুসেনার বিমান হারিয়ে যাওয়ায় এমএইচ ৩৭০ বিমানের কথাটাই প্রথমে মনে এসেছে বিমানবন্দরের অফিসারদের।

২০১০-এ ইউক্রেনে পাঠিয়ে ৪০টি এএন-৩২ বিমানকে প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত করা হয়েছে। তার পর থেকে ধাপে ধাপে ভারতেই বাকি বিমানগুলির ‘মিড-লাইফ আপগ্রেড’ করা হচ্ছে। যে বিমানটি এ দিন হারিয়ে গিয়েছে, ২০১৫ সালেই সেটিতে নতুন ইঞ্জিন বসিয়ে আধুনিকীকরণ করা হয়।

আরও পড়ুন: বিমান নিখোঁজের ১০ রহস্যময় ঘটনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement