সিরিয়ার আকাশ থেকে আগুন ঝরাতে থাকা রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দিয়েছে তুরস্ক। আমেরিকায় তৈরি এফ-১৬ পাঠিয়ে তারা গুলি করে নামিয়েছে রুশ সুখোই-২৪। কিন্তু রাশিয়া আর একটু সতর্ক হলে নাকি তুর্কি বিমানবাহিনী এঁটে উঠতে পারত না তাদের সঙ্গে। বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। ঠিক যেমন ভারতের হাতে থাকা সুখোই-এর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতাই নেই তুর্কিদের।
সুখোই গোত্রের সব যুদ্ধবিমানই রাশিয়ায় তৈরি। তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী শ্রেণিগুলির অন্যতম হল সুখোই-৩০। ভারতীয় বিমানবাহিনী এই সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানই ব্যবহার করে। এই ফাইটার জেটে রয়েছে ক্যানার্ড নামে অতিরিক্ত দুটি ডানা। এই ক্যানার্ড যুদ্ধবিমানের গতি ও ভারসাম্য দারুণভাবে চালকের নিয়ন্ত্রণে রাখে। থ্রাস্ট-ভেক্টর কন্ট্রোল নামে একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে সুখোই-৩০ বিমানে। সেই ব্যবস্থা বিমানের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণে খুব দক্ষ। থ্রাস্ট-ভেক্টরিং-এর সুবাদে কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এত দ্রুত এগিয়ে যায় সুখোই-৩০ যে তাকে তাড়া করা অপেক্ষাকৃত পুরনো দিনের যুদ্ধবিমানের পক্ষে খুব কঠিন।
স্বাভাবিকভাবেই ভারতের মতো রাশিয়ার হাতেও সুখোই-৩০ যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটিতে হামলা চালানোর জন্য রাশিয়া পুরনো মডেলের সুখোই-২৪ বিমানগুলিকে আসরে নামিয়েছে। তুরস্কের হাতে থাকা এফ-১৬ আর রাশিয়ার সুখোই-২৪ মোটামুটি একই গোত্রের। রুশ সুখোই-২৪-এর জন্ম ১৯৭৪ সালে। মার্কিন এফ-১৬-এর জন্ম তার এক বছর আগে। সুখোই-২৪-এর দু’টি ইঞ্জিন। এফ-১৬-এর একটি। কিন্তু মোটামুটি একই সময়ে তৈরি এই দুই যুদ্ধবিমানেরই কর্মক্ষমতা প্রায় সমান। একটা ই়ঞ্জিন হলেও অপেক্ষাকৃত হালকা মডেলের এফ-১৬ সহজেই সুখোই-২৪-এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। ফলে সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের কাছে দু’টি তুর্কি এফ-১৬ এক সঙ্গে হামলা চালিয়ে একটি রুশ সুখোই-২৪-কে সহজেই খতম করতে পেরেছে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা ভারতের সঙ্গে কিছুতেই ঘটাতে পারত না তুরস্ক। ভারতীয় বিমানবাহিনী সুখোই-৩০ ব্যবহার করে। ১৯৯০-তে তৈরি এই বিমান অনেক আধুনিকীকরণের পর কাজ শুরু করেছে ১৯৯৬ সালে। এফ-১৬ বা সুখোই-২৪-এর চেয়ে সুখোই-৩০ অনেক আধুনিক মডেল। ভারত রাশিয়া থেকে সুখোই-৩০ কেনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করার পর একগুচ্ছ নতুন এবং বিধ্বংসী বৈশিষ্ট যোগ করে সুখোই-৩০-এর সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণটিই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর সুখোই-৩০ স্কোয়াড্রন যদি রওনা দিত আইএস-বিরোধী অভিযানে, তা হলে সেই বিমানে হামলা চালানোর আগে যে কোনও দেশকে হাজার বার ভাবতে হত। কারণ সুখোই-৩০ এমনই বিধ্বংসী যুদ্ধবিমান যে তাকে তাড়া করা বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার সামিল। তাড়া করে ধ্বংস করা গেলে বাঁচোয়া। না হলে যে বিমান তাড়া করেছিল, সুখোই-৩০-এর হাতে তার ধ্বংস অনিবার্য।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া যদি একটু সতর্ক হত, তা হলে বিপর্যয় এড়ানোই যেত। ভারত সুখোই গোত্রের যে আধুনিতকতম বিমান ব্যবহার করছে, রাশিয়া সিরিয়ার আকাশে সেই ফাইটার পাঠালে তুরস্কের সাহস হত না হামলা চালানোর।