India

মায়ানমার নিয়ে সুর চড়াচ্ছে ভারত

শব্দের ব্যবহারেই স্পষ্ট, ভারত এই প্রথম বার খোলাখুলি সে দেশের জুন্টা শাসন এবং সেনা হিংসার নিন্দা করছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৩০
Share:

ছবি: রয়টার্স।

মায়ানমারের হিংসা অব্যাহত। আজও সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন সে দেশের ৫ জন নাগরিক। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। ফেব্রুয়ারির এক তারিখ মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে নিহতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৫৮০ বলে জানাচ্ছে সে দেশের বেসরকারি সূত্র। এই আগুনের আঁচ লাগছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে। অদূর ভবিষ্যতে শরণার্থীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ার সম্ভাবনা তো রয়েছেই। পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের উপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী যে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিকে রূপায়িত করতে চাইছেন, তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি ডামাডোলের সুযোগ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু জঙ্গি সংগঠন মাথা চাড়া দেবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Advertisement

সব মিলিয়ে ত্রস্ত দিল্লি চিনের তোয়াক্কা না করেই মায়ানমারের সেনা অভিযান নিয়ে এ বার সুর চড়া করছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, চিনের সঙ্গে মায়ানমারের জুন্টা সরকারের ঘনিষ্ঠতার কারণে দিল্লি তাদের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রেখে চলে। কিন্তু এখন শিয়রে শমন। তাই সুর বদল। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে মায়ানমার নিয়ে রুদ্ধকক্ষ বৈঠক হয়েছে বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি টি থিরুমূর্তি। তিনি ওই বৈঠকে সে দেশের সেনার কার্যকলাপ নিয়ে কড়া সমালোচনা করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করেছেন বলে সূত্রের খবর। ভারত এখন নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যও বটে। এই বৈঠকের পর থিরুমূর্তি কড়া ভাষায় মায়ানমারের ঘটনার নিন্দা করে টুইট করেছেন। আটক রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবি করেছেন। সে দেশের সেনাকে যতটা সম্ভব সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর বক্তব্য, “একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই। আমরা চাই আইনের শাসন বলবৎ (মায়ানমারে) হোক। মায়ানমারে গণতন্ত্র ফিরে আসাকে সমর্থন করে ভারত।”

শব্দের ব্যবহারেই স্পষ্ট, ভারত এই প্রথম বার খোলাখুলি সে দেশের জুন্টা শাসন এবং সেনা হিংসার নিন্দা করছে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, বেশ কিছু কারণে সাউথ ব্লকের অবস্থানের তারতম্য ঘটেছে। প্রথমত এবং প্রধানত, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডের সঙ্গে মায়ানমারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সে দেশের হিংসার জেরে মণিপুর এবং মিজোরামে এখনও পর্যন্ত দেড় হাজার শরণার্থী এসেছেন, যার সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টিকে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মায়ানমারের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে সংযোগের ইতিহাস রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের। অনেক সময়েই তারা এই রাজ্যগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও তাদের কিছু যোগাযোগ রয়ে গিয়েছে। ফলে সীমান্তে হিংসা এবং নৈরাজ্য বাড়লে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টি সমস্যার মুখে পড়বে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক স্তরে এই হিংসার উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ করে মায়ানমারের গণতান্ত্রিক পরিসরে চিনের ভূমিকাকেও সঙ্কুচিত করার একটা কূটনৈতিক প্রয়াস রয়েছে। মায়ানমারের সেনা আচরণের পিছনে বেজিং-এর পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে বলেও ঘরোয়া ভাবে প্রচার করছে দিল্লি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement