গুজরাতের ভুজ, মহারাষ্ট্রের লাতুর বা কয়নায় ভূমিকম্পের স্মৃতি এখনও ভোলেননি কেউ। তবু সে সব এলাকা দিয়ে বা তার পাশ দিয়ে ছুটবে এ দেশের প্রথম বুলেট ট্রেন। তাই ভূমিকম্পজনিত দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমাতে জাপানের ধাঁচে আমদাবাদ-মুম্বই বুলেট ট্রেন রুটে (৫০৮ কিলোমিটার) শিনকানসেন প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশনাল হাই স্পিড রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচএসআরসিএল)।
আমদাবাদ থেকে মুম্বইয়ের বুলেট ট্রেনের সমীক্ষায় দেখা যায়, ওই অঞ্চলে রয়েছে একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা (কচ্ছ-কয়না-লাতুর-ওসমানাবাদ)। এনএইচএসআরসিএল-র এক আমলার কথায়, ‘‘বুলেট ট্রেনের গড় গতিবেগ হবে ৩২০ কিলোমিটার। ওই সময়ে ভূমিকম্প হলে ট্রেন লাইন থেকে ছিটকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।’’ তা হলে জেনেশুনে ওই এলাকাতেই কেন লাইন পাতা হচ্ছে? এনএইচএসআরসিএল-র দাবি, আমদাবাদ থেকে মুম্বইয়ের মধ্যে লাইন পাতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ইউপিএ আমলে। একাধিক এলাকার মধ্যে সমীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, বুলেট ট্রেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে লাভজনক রুট মুম্বই-আমদাবাদ। সে কারণে ওই দু’টি শহরকে বেছে নেওয়া হয়। আর ভূমিকম্পের প্রশ্নে সংস্থার দাবি, লাইন এমন ভাবে পাতা হচ্ছে যাতে তা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে যতটা সম্ভব কম যায়। তাতে বিপদের সম্ভাবনা কমবে।
কিন্তু ভূমিকম্প হলে কী হবে?
এনএইচএসআরসিএল-এর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের ওই এলাকাটি ভূমিকম্পপ্রবণ ঠিকই। তার মানে এই নয় যে সেখানে নিয়মিত ভূমিকম্প হচ্ছে। আর জাপানে প্রতিদিন কয়েক শো ছোটখাটো ভূমিকম্প হয়। মাটির নীচে থাকা বিভিন্ন মহাদেশীয় প্লেটগুলির পারস্পরিক সংঘর্ষ প্রায় নিত্যদিনের ভূমিকম্পের কারণ। তা সত্ত্বেও সে কারণে গত পঞ্চাশ বছরে বুলেট ট্রেনে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। উন্নত প্রযুক্তিই এর কারণ। এ দেশেও তাই শিনকানসেন প্রযুক্তি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
বুলেট ট্রেনের রুটে থাকা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় মাটির গভীরে সিসমোমিটার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনএইচএসআরসিএল। সংস্থার মুখপাত্র ধনঞ্জয় কুমার বলেন, ‘‘এপিসেন্টার থেকে প্রাথমিক কম্পন মাটির অনেক গভীরে থাকা সিসমোমিটার যন্ত্রে ধরা পড়বে। সিসমোমিটার থেকে সেই বার্তা যাবে বুলেট ট্রেনের কন্ট্রোল রুমে। যার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয় ভাবে লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। থমকে যাবে ট্রেন।’’