দেখতে দেখতে ১৩ বছর পার হয়ে গেল মুম্বই হামলার। ফাইল চিত্র
মুম্বই হামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে হবে পাকিস্তানকে। ইসলামাবাদকে এই বার্তা পৌঁছে দিতে পাক হাইকমিশনারের এক উচ্চপদস্থ কূটনীতিককে তলব করে সাফ জানিয়ে দিল ভারত। এই হামলার ১৩তম বর্ষপূর্তিতে বিদেশমন্ত্রক থেকে এক মৌখিক বার্তায় বলা হয়েছে, প্রতিশ্রুতি মেনে ভারতের নিয়ন্ত্রিত অ়ঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দেওয়া বন্ধ করুক পাকিস্তান।
দেখতে দেখতে ১৩ বছর পার হয়ে গেল মুম্বই হামলার। ১৩ বছর আগে আজকের দিনে জলপথে মুম্বইয়ে ঢুকে পড়েছিল ১০ পাকিস্তানি জঙ্গি। তারপর বাকিটা রক্তে ভেজা ইতিহাস। জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিতে মারা গিয়েছিল ১৬৫ জন সাধারণ মানুষ। ১০ জনের মধ্যে জীবিত অবস্থায় ধরা পড়েছিল এক জঙ্গি। নাম আজমল কসাব। বাড়ি পাকিস্তানের ফরিদকোটে।
আহত কসাব কিছুটা সুস্থ হলে তাকে টানা ৮১ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চালান মুম্বই হামলার তদন্তকারী আধিকারিকরা। জানা যায়, পাকিস্তানের মাটিতে বসেই এই হামলার ছক কষা হয়। হাত ছিল জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা-র। মদত ছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর।
বিচারে কসাবকে ফাঁসির সাজা দেয় আদালত। বিচার চলাকালীন নিজের পক্ষে লড়ার জন্য আইনজীবীও পায় সে। এমনকি ভারতীয় বিচারব্যবস্থার নিয়ম অনুযায়ী ফাঁসি সাজা ঘোষণার পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করার সুযোগ পায় কসাব। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তার আবেদন খারিজ করে দেন। ২১ নভেম্বর, ২০১২ সালে কসাবের ফাঁসি হয়।
মুম্বই হামলার পর ভারতের অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তানে তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু, সেই তদন্ত এখন বিশ বাঁও জলে। ২৬/১১-র হামলার মূলচক্রী হিসাবে হাফিজ সইদ এবং জাকিউর রহমান লকভির নাম উঠে এলেও, তাঁরা পাকিস্তানের মাটিতে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে লকভিকে গ্রেফতার করা হলেও, ২০১৫-তে জামিন পেয়ে যান তিনি।
কিন্তু, পাকিস্তানের উপর চাপ অব্যাহত থাকায় ২০২০ সালে হাফিজ সইদকে একটি অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
লখভিকেও একটি আর্থিক অনিয়ম মামলায় গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু, তাদের কাউকেই ২৬/১১-র মামলায় যুক্ত করা হয়নি।
আদালতে প্রমাণ হিসাবে যে সমস্ত নথি ভারত পাকিস্তানকে দিয়েছিল, সেগুলিও তারা বাতিল করেছে। জানিয়েছে, এগুলির কোনো আইনি ভিত্তি নেই। আদালতে সাক্ষী হিসাবে ২৪ জন ভারতীয়কে পাঠানোর কথা বলে পাকিস্তান। কিন্তু, তাদের উপর হামলা হতে পারে — এই আশঙ্কায় ভারত কাউকে পাঠায়নি। অনলাইনে তাঁদের সাক্ষ্য নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল কেন্দ্র। পাকিস্তান থেকে দু’টি দল ২০১২ এবং ২০১৩ সালে ভারতে আসে। কিন্তু, সেই আসা-যাওয়াতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। পাকিস্তানে স্থবির হয়ে রয়েছে ২৬/১১-র বিচার প্রক্রিয়া।