শেষ মুর্হূতের তৎপরতা। পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে (এনএসজি) ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে টানটান লড়াই। কাল, বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে শুরু হচ্ছে এনএসজি প্লেনারি। তার আগেই বুধবার সোলে পৌঁছলেন ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর।
এনএসজি-তে অন্তর্ভুক্তির জন্য সদস্য দেশগুলির কাছে নয়াদিল্লির দাবি জোরদার ভাবে তুলে ধরতে সোলে গেলেন জয়শঙ্কর। গত সোমবার থেকে সেখানে এনএসজি-র সদস্য ৪৮টি দেশের মধ্যে সরকারি স্তরের কথা শুরু হয়েছে। সেই বৈঠকের উপর নজর রাখছিলেন জয়শঙ্কর। এ বার সোলে সদস্য দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা করে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন তিনি।
তবে ভারতের এই তৎপরতা নিয়ে বেশি প্রচারে নারাজ নয়াদিল্লি। একটি সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘এটা সত্যি, জয়শঙ্কর সোলে গিয়েছেন। কিন্তু এই বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল প্রক্রিয়া। তাই এখনই এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না।’’
বসে নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এনএসজি-তে ভারতের সদস্যপদ পাওয়ার পথে সব চেয়ে বড় বাধা চিন। সেই বাধা কাটাতে তৎপর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী কালই উজবেকিস্তানের তাসখন্দে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা মোদীর। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকের ফাঁকেই আলোচনা হওয়ার কথা দুই রাষ্ট্রনেতার। সেই বৈঠকে এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির জন্য মোদী যে চিনের সম্মতি আদায়ের চেষ্টা চালাবেন, তা বলাই বাহুল্য।
চিন অবশ্য এই ব্যাপারে আগের থেকে সুর নরম করেছে। মঙ্গলবারই সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেছিলেন, ‘‘আমরা ভারত বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নই। পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর না করে এনএসজি-র সদস্য হওয়া যায় কি না, সেটাই আমাদের বিবেচনার বিষয়। এনপিটি-তে স্বাক্ষর করেনি, এমন সদস্যদের জন্য এনএসজি-তে আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি।’’ আর বুধবার চুনইং জানান, এনএসজি-তে সদস্যপদ পাওয়ার জন্য ভারতের দাবির বিষয়ে ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ পালন করবে চিন। তিনি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের এনএসজি-তে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সদস্য দেশগুলির মধ্যে তিন দফা ঘরোয়া আলোচনা হয়েছে। এই ব্যাপারে বেজিংও আশাবাদী। পাশাপাশি চুনইং স্পষ্ট করেছেন যে, সোল প্লেনারিতে ভারত ও পাকিস্তানের এনএসজি-তে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে নেই। যে সব দেশ এনপিটি-তে সই করেছে, প্লেনারিতে এমন দেশগুলির অন্তর্ভুক্তি নিয়েই কথা হবে। ঘটনা হল, এই বিষয়ে বারবার সুর বদলেছে বেজিং। কখনও বলেছে, এনপিটি-তে স্বাক্ষর না করা পর্যন্ত ভারতকে এনএসজি-র সদস্য করা যাবে না। কখনও বলছে, এই বিষয়ে ভারত বা পাকিস্তান— কাউকেই তারা নিশানা করছে না। তবে শুধু চিন নয়— তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডও এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন-সহ বেশির ভাগ দেশ এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে। আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন আপাতত এনপিটি-তে ভারতের স্বাক্ষর না-করার বিষয়টিতে চোখ বন্ধ করেই রয়েছে। এ দিনও এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে ফ্রান্স।
এই পরিস্থিতিতে আগামী কাল সোলে শুরু হচ্ছে এনএসজি প্লেনারি। আর সে দিনই তাসখন্দে চিনফিং-মোদী বৈঠক হতে পারে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং জয়শঙ্করের চেষ্টাতেই এই বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই বৈঠকেও যে এনএসজি-র প্রসঙ্গ উঠবে, তা নিশ্চিত। তাই বৃহস্পতিবার কূটনৈতিক মহলের নজর থাকবে সোল এবং তাসখন্দে।