কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। —ফাইল চিত্র।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিংহ নিজ্জরের মৃত্যুর পিছনে ভারত যোগের অভিযোগ তোলার পরেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারত। নিজের অভিযোগের পক্ষে ফের মুখ খুললেন ট্রুডো। এ বার তাঁর অভিযোগ, নিজ্জর হত্যার পিছনে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বহু দিন আগেই ভারতকে জানানো হয়েছিল। আজ এক সাংবাদিক বৈঠকে ট্রুডো বলেন, “সোমবার যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল তা যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। কয়েক সপ্তাহ আগেই ওই অভিযোগ জানানো হয়। আমরা ভারতের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে চাই। আশা করছি ভারতও তাতে সাড়া দেবে। যাতে আমরা এ ধরনের গুরুতর বিষয়ের গভীরে পৌঁছতে পারি।”
প্রসঙ্গত, ট্রুডো এর আগে ভারতকে নিশানা করার পরেই কূটনৈতিক স্তরে জবাব দেয় ভারত। একে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও উল্লেখ করা হয়। আজকের ট্রুডোর অভিযোগের পরে দু’দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে নামবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে কানাডার নাগরিকদের ভিসা স্থগিত রেখেছে ভারত। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগও তুলেছে নয়াদিল্লি। শশী তারুর অবশ্য চলতি বিতর্কের থেকে দু’দেশের সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ট্রুডোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারতের তরফে প্রকাশিত নথিতে বলা হয়েছে, নিহত জঙ্গি হরদীপের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ ছিল। গোয়েন্দাদের তরফে দেওয়া রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের নানা জায়গায় হামলা চালানোর ছক কষছে হরদীপ। ওই ‘ডসিয়েরে’ দেখানো হয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকেই নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিল হরদীপ। তার জেরেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। আশির দশকে এক স্থানীয় গুন্ডা থেকে কী ভাবে হরদীপ জঙ্গি হয়ে উঠল তা তুলে ধরা হয়েছে ওই নথিতে।
ডসিয়েরে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে হরদীপ পাসপোর্ট জালিয়াতি করে কানাডায় যায়। সেই সময়ে ট্রাকচালক হিসাবে কাজ করত সে। পাকিস্তানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও সে নিয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই নথিতে। পঞ্জাবের জালন্ধরের বাসিন্দা হরদীপ এর পরেই গুরনেক সিংহের ছত্রছায়ায় ক্রমশ আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কুখ্যাত জগতে পরিচিতি তৈরি করে। ১৯৮০ থেকে ’৯০-এর মধ্যে জঙ্গি সংগঠন খলিস্তান কমান্ডো ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হয় সে। ২০১২ সাল থেকে খলিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান জগতার সিংহ তারার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে হরদীপ। জগদীপের সূত্রেই হরদীপের পাকিস্তান যোগ গভীর হয়। পাকিস্তান থেকে ফিরে সে মাদক ও চোরাচালানে প্রাপ্ত অর্থ সন্ত্রাসমূলক কার্য়কলাপে ব্যবহার করতে শুরু করে।
জগদীপের সঙ্গে যুক্ত হয়েই পঞ্জাবে নাশকতামূলক কার্যকলাপের ছক কষেছিল হরদীপ। কানাডায় নিজস্ব সংগঠন তৈরি করে। ওই দলেরই সদস্য ছিল মনজিৎ সিংহ ধালিওয়াল, সর্বজিৎ সিংহ, অনুপবীর সিংহ, দর্শন সিংহেরা। ২০১৫ সালে হরদীপের দলের এই সদস্যেরা কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডসিয়েরে। ২০১৪ সালে হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সাচ্চা সউদায় হামলার ছক কষে হরদীপ। নিজে ভারতে ঢুকতে না পারায় তার সংগঠনকে নির্দেশ দেয় প্রাক্তন ডিজিপি মহম্মদ ইজ়হার আলমকে নিশানা করার জন্য। পঞ্জাবের গ্যাংস্টার আরশদীপ সিংহ গিল ওরফে আর্শ ডালার সঙ্গে যোগ দেয়। এর পরে বহু কুখ্যাত কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে হরদীপের বিরুদ্ধে।
হরদীপকে ঘিরে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যে আজ কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর জানিয়েছেন, একটি অভিযোগের থেকেও ভারত-কানাডা সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্ক পুনর্গঠনে জোর দিয়েছেন তিনি। তাঁর আশা, দু’পক্ষই পরিণত আচরণ করবে যাতে এই বিতর্কের কোনও প্রভাব না থাকে। শশীর কথায়, “দু’দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৭ লক্ষ ভারতীয় কানাডায় থাকেন। কানাডায় বিদেশ থেকে যাওয়া পড়ুয়াদের মধ্যে ভারতীয়রাই ৪০ শতাংশ। এই সব বিষয় মাথায় রাখলে ভারত-কানাডার সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
আজ কানাডায় থাকা আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন দাবি করেছেন, ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, তা বন্ধু দেশগুলিকে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ আমেরিকান বিদেশসচিব অ্যান্টিনি ব্লিঙ্কেন আবেদন জানিয়েছেন, হরদীপের মৃত্যুর তদন্তে ভারত যাতে সহযোগিতা করে।