বিশেষ অভ্যর্থনার পর রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরোচ্ছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।
গত কাল চণ্ডীগড়ে পৌঁছেই পঠানকোটে হামলার নিন্দা করেছিলেন। তাঁর এ বারের ভারত সফরের সুর তখনই বেঁধে দিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। আর আজ শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ নিয়েই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে জঙ্গি মোকাবিলায় এক মজবুত সমন্বয়ের ডাক দিয়েছে দু’দেশ। আর ৩৬টি বহুপ্রতীক্ষিত অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতকে সরবরাহ করা নিয়েও প্রাথমিক চুক্তিপত্র আজ সই হয়েছে।
ফ্রান্স থেকে রাফাল কেনার বিষয়ে শেষ ধাপের আর্থিক খুঁটিনাটি নিয়ে যদিও এখনও কিছু আলোচনা বাকি রয়েছে। তবে দিন কয়েকের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন খোদ ওঁলাদ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তির ফলে এক ধাক্কায় অনেকটাই শক্তিশালী হবে ভারতীয় বায়ুসেনা।
এমন একটি সময়ে ওলাঁদ ভারত সফরে এসেছেন, যখন সন্ত্রাস ও নিরাপত্তার বিষয়টি সার্বিক ভাবে রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে রাষ্ট্রনায়কদের। দক্ষিণ এশিয়াই শুধু নয়, সাম্প্রতিক প্যারিস-হামলার পর জঙ্গি হানার আশঙ্কায় চরম উদ্বেগ ইউরোপে। আফগানিস্তানে তালিবানি গতিবিধি নিয়ে আতঙ্কিত আমেরিকা দফায় দফায় কড়া বার্তা দিচ্ছে ইসলামাবাদকে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের আলোচনায় জঙ্গি দমনে সহযোগিতার বিষয়টিই অগ্রাধিকার পেয়েছে। মোদীর কথায়, ‘‘প্যারিস যে দিন জঙ্গিদের হাতে আক্রান্ত হল, তখনই আমি মনস্থির করেছি, এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসের বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হবে ফ্রান্সের প্রতিনিধিকেই।’’ কেননা, মোদীর ব্যাখ্যা, ফ্রান্স আমাদের দেখিয়েছে, কী ভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেও নিজেদের নীতি ও উন্নয়নের কাজে অবিচল থাকা যায়।
গত কালই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওলাঁদ ও ওবামাকে এক সঙ্গে পাশে পেয়েছিল ভারত।
দু’জনেই পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে আজকের যৌথ বিবৃতিতে ফুটে উঠেছে সেই একই সুর। বিবৃতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলা হয়েছে, কারণ যা-ই দেখানো হোক না কেন, সন্ত্রাসবাদকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। দু’দেশই লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন, হক্কানি গোষ্ঠী ও আল কায়দা-সহ সমস্ত জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান করার কথা বলেছে। পঠানকোট ও গুরদাসপুরে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার নিন্দা করে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে ভারত ও ফ্রান্স। ২০০৮-এ মুম্বই হামলায় নিহতদের মধ্যে দু’জন ফরাসি নাগরিকও ছিলেন। আজকের যৌথ বিবৃতিতে সেই হামলার কথা তুলে ধরে দোষীদের শাস্তির দাবি করা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। পঠানকোটের ঘটনা টেনে পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করেই রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়েই মতভেদ দূর করা উচিত, কিন্তু গুলির বৃষ্টির মধ্যে শান্তির আলোচনা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপতি বুঝিয়ে দেন, ভাল সন্ত্রাসবাদ কিংবা মন্দ সন্ত্রাসবাদ বলে কিছু হয়না। সন্ত্রাসের গোটা বিষয়টিই অশুভ।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তার মধ্যেই আইএস জঙ্গি ও আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আজ আলোচনা করেছে ভারত ও ফ্রান্স। আফগান সীমান্ত জঙ্গিদের জন্য ক্রমশ স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে বলেও মনে করছেন মোদী ও ওলাঁদ। দুই নেতার বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বা এর সঙ্গে জুড়ে থাকা ব্যক্তির হাতে যাতে অর্থ বা অন্য কোনও রকমের সাহায্য না পৌঁছয়, সে জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে।
আগামিকাল প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে উপস্থিত থাকবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। শুধু তাই-ই নয়, এই প্রথম কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের (ফ্রান্স) সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনার সঙ্গে কুচকাওয়াজে অংশ নেবে। নয়াদিল্লিতে গত ২৩ তারিখেই প্রজাতন্ত্র দিবসের মহড়ায় পা মিলিয়েছে ফরাসি সেনা।
প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে রাফাল চুক্তির অগ্রগতি নিঃসন্দেহে ভারতের কাছে একটি বড় প্রাপ্তি। ওলাঁদের মতে, এই চুক্তি রূপায়িত হলে আগামী ৪০ বছরের জন্য দু’দেশের মধ্যে শিল্প ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতার রাস্তা চওড়া হবে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাফালের মতো সর্বাধুনিক প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের বিশেষত্ব অনেক। প্রথমত, এতে জ্বালানি কম লাগে। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের যুদ্ধবিমানকে সব দিক থেকে টেক্কা দিতে রাফালের জুড়ি নেই। মাটির কাছাকাছি পৌঁছে শত্রুর উপর হামলা চালাতেও দক্ষ এই যুদ্ধবিমান। ইউপিএ জমানাতেই ১২৬টি রাফাল কিনতে চেষ্টা করেছিল নয়াদিল্লি। মোদীর ফ্রান্স সফরের সময়ে এই নিয়ে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ৩৬টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত।