এত কম রাফাল! উল্লসিত নয় বর‌ং হতাশই বায়ুসেনা

এখনই দরকার ১০৮টি যুদ্ধবিমান। কেনা হল ৩৬টি। তা-ও সেগুলি সব হাতে পেতে লাগবে সাড়ে পাঁচ বছর। শুক্রবার ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে সই করলেন মনোহর পর্রীকর। কিন্তু তাতে উল্লাস নয়, বর‌ং হতাশাই ছড়াল দিল্লিতে বায়ুসেনার সদর দফতরে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

এখনই দরকার ১০৮টি যুদ্ধবিমান। কেনা হল ৩৬টি। তা-ও সেগুলি সব হাতে পেতে লাগবে সাড়ে পাঁচ বছর।

Advertisement

শুক্রবার ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে সই করলেন মনোহর পর্রীকর। কিন্তু তাতে উল্লাস নয়, বর‌ং হতাশাই ছড়াল দিল্লিতে বায়ুসেনার সদর দফতরে।

বৃহস্পতিবার রাতের খবর, ইসলামাবাদ-লাহৌর হাইওয়েতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নামিয়ে মহড়া শুরু করেছে পাকিস্তান। মুখে যতই পাকিস্তান রুটিন মহড়া বলুক, নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের বার্তা স্পষ্ট। যুদ্ধের জন্য পাকিস্তান তৈরি। এমন নয় যে ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে। বরং অঙ্কের হিসেবে তারা এগিয়েই। ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান হাতে চলে এলে এগিয়ে যাবে আরও অনেকটাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে ৮টি এফ-১৬ বেচতে রাজি হওয়ায় দিল্লির চিন্তা বেড়েছিল। কিন্তু রাফাল হাতে চলে এলে তারা ফের পাকিস্তানকে টেক্কা দিতে পারবেন বলেই মনে করছেন। কিন্তু বায়ুসেনা কর্তারা বলছেন, বাহিনীর শক্তি এখনও প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। খাতায়-কলমে যুদ্ধবিমান অনেক হলেও অধিকাংশই জরাগ্রস্ত। বাহিনীতে যত যুদ্ধবিমান রয়েছে, তার সব ক’টি একসঙ্গে অভিযানে নামানোর অবস্থায় থাকে না। বিমানের বয়স যত বাড়ে, মেরামতির কাজও বাড়ে। বায়ুসেনার এক পদস্থ কর্তার দাবি, ‘‘এখনই আমাদের ছয় স্কোয়াড্রন, অর্থাৎ ১০৮টি রাফাল-এর মতো মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট প্রয়োজন। তার বদলে আজ মাত্র দু’স্কোয়াড্রন বিমান কেনার চুক্তি হল। সেগুলোও সব হাতে আসতে সাড়ে পাঁচ বছর লাগবে।’’

Advertisement

এমনিতেই পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে একই সময়ে যুদ্ধ লাগলে ভারতের ৪২ থেকে ৪৪ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান প্রয়োজন। রয়েছে মাত্র ৩৩ স্কোয়াড্রন। তার তিন ভাগের এক ভাগই জরাগ্রস্ত মিগ। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বায়ুসেনা কর্তাদের হিসেব মতো, আগামী ১০ বছরে অন্তত ৪০০টি যুদ্ধবিমান কেনা হলে তবেই একসঙ্গে পাকিস্তান-চিনের মোকাবিলা করা সম্ভব। বায়ুসেনার সেরা অস্ত্র এখন রুশ সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান। কিন্তু তাদের যন্ত্রাংশ জোগাড় করতে বায়ুসেনার ঘাম ছুটছে। যার ফলে, যে কোনও সময়ে মাত্র ৫৫ শতাংশ সুখোই ওড়ার অবস্থায় থাকে। তাই সুখোইয়ের যন্ত্রাংশ কেনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে চাইছে বায়ুসেনা।

ইউপিএ-জমানায় ১২৬টি মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু প্রক্রিয়াগত কারণে দেরি হওয়ায়, সিদ্ধান্ত বাতিল করে সরাসরি ৩৬টি রাফাল তৈরি অবস্থাতেই কিনে ফেলার পরিকল্পনা হয়। আজ ভারত ও ফ্রান্স যে চুক্তি করেছে, তা ৩৬টি রাফাল-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যার অর্থ, আরও রাফাল কিনতে হলে নতুন করে দরদাম করতে হবে দিল্লিকে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের ভরসা এখন দেশে তৈরি তেজস। মিগ-২১ ও মিগ-২৭-এর যুদ্ধবিমানগুলি একেবারে অচল হয়ে পড়লে সেই শূন্যস্থান তেজস দিয়েই ভরাট করা হবে। ১২০টি তেজস বাহিনীতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বায়ুসেনার। কিন্তু সে কাজ করতেও আরও ছ’বছর লাগবে।

বায়ুসেনা কর্তারা একমাত্র একটি বিষয়েই উল্লসিত। তা হল, রাফাল-এর সঙ্গে মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্র। আকাশ থেকে আকাশে ছোড়ার এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১৫০ কিলোমিটার। তা-ও দৃশ্যমান এলাকার বাইরে। পাকিস্তানের সঙ্গে শেষ সংঘাত, কারগিলের যুদ্ধে মাত্র ৫০ কিলোমটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল বায়ুসেনা। পাকিস্তানের হাতে এখন ৮০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

কিন্তু মেটিওর হাতে থাকার অর্থ রাফাল যুদ্ধবিমান থেকে ভারতের এলাকা থেকেই একই সঙ্গে পাকিস্তান ও চিনে ক্ষেপণাস্ত্র দাগা সম্ভব হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement