প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য এ বার বানানো হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির একটি ‘পক্ষীরাজ ঘোড়া’!
যাতে চড়ে তাঁর ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশ-যাত্রায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সেরে ফেলতে পারেন, ঘুমোতে পারেন। জরুরি বৈঠক করতে পারেন, নির্ভয়ে। নিশ্চিন্তে, নিরাপদে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য সেই ‘পক্ষীরাজ ঘোড়া’টি বানানো হচ্ছে একেবারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিমান ‘এয়ার ফোর্স-ওয়ান’-এর মতো। যার নাম- ‘এয়ার ইন্ডিয়া্-ওয়ান এয়ারক্র্যাফ্ট’। যে বিমানে থাকবে রেডারের সিগন্যাল ধরার জন্য বিশেষ ধাতব ব্যবস্থা। থাকবে শত্রু পক্ষের রেডারকে ধোঁকা দেওয়ার ব্যবস্থা। আর থাকবে আকাশে শত্রু পক্ষের ছোঁড়া গ্রেনেড, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানা এড়ানোর জন্য হঠাৎ বিমানের গতিপথ ও অভিমুখ বদলে ফেলার ক্ষমতা। তার সঙ্গে থাকবে দিন-রাতের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও আপৎকালীন অস্ত্রোপচারের জন্য সর্বাধুনিক অপারেশন থিয়েটারও। ঝাঁ-চকচকে রেস্তোরাঁ আর অনেককে নিয়ে বসার জন্য বিশাল ডাইনিং হলও।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গত দু’বছরে আকাশে ওড়ার ব্যাপারে রীতিমতো ‘রেকর্ড’ করে ফেলেছেন মোদী। এত অল্প সময়ে এত বার বিদেশ সফর ভারতের আর কোনও প্রধানমন্ত্রী করেননি। ফলে, তাঁর আকাশ-যাত্রার মধ্যেই বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর জরুরি বৈঠক করতে হয় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। তারই মধ্যে একটু ফুরসৎ পেলে তাঁকে একটু ঘুমিয়েও নিতে হয়।
যে বিমানে এখন বিদেশ সফরে যান প্রধানমন্ত্রী মোদী।
কিন্তু এখন তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার যে বিমানে আজ ওয়াশিংটন, কাল টরেন্টো তো পরশু টোকিওয় উড়ে যান, তাতে তাঁর মতো ‘হাই-প্রোফাইল’ এক রাষ্ট্রনেতার জন্য জরুরি নি্রাপত্তা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে যথেষ্টই। অবসরপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এয়ার কমোডর প্রশান্ত দীক্ষিত জানাচ্ছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার নতুন বিমানটি আদতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ মডেলের। ওই মডেলের আরও দু’টি বিমান তাঁর মন্ত্রকের হাতে আসবে কি না, খবর, চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। ‘এয়ার ফোর্স-ওয়ান’-এর ধাঁচে বানানো ওই বিমান দু’টিকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিদেশ সফরে কাজে লাগানোর কথা ভাবছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
আরও পড়ুন- তথ্যের ফাঁস এড়াতে একসুর সনিয়া-মোদী
ওভাল অফিস নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘এয়ার ফোর্স-ওয়ান’ বিমান।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য যে একটি সর্বাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উড়ান প্রয়োজন, বেশ কিছু দিন আগে তা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল মনমোহন ভাণ্ডারি। তিনি বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমানে সর্বাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও আকাশে ওড়ার সময় তার দু’পাশে, ওপরে, নীচে এবং সামনে, পিছনে কমান্ডো বোঝাই একটি ‘পাইলট বিমানবহর’ থাকে। যার ফাঁক গলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমানে হানা দেওয়া কার্যত, অসম্ভবই। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এখন যে বিমানে চড়ে বিদেশ সফরে যান, সেগুলো বোয়িং-৭৪৭ মডেলের। গত দু’দশক ধরেই সেগুলোর ব্যবহার হচ্ছে।
কী কী নতুন ব্যবস্থা থাকছে এয়ার ইন্ডিয়া-ওয়ানে?
১) সর্বাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
২) গ্রেনেড ও রকেট হামলা ঠেকাতে পারবে।
৩) শত্রু পক্ষের রেডারকে অচল করে দিতে পারবে।
৪) মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
৫) রেডার ওয়ার্নিং রিসিভার ও মিসাইল ওয়ার্নিং সিস্টেম।
৬) ২০০০ মানুষের খাবার মজুত করা যাবে।
৭) আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে মাঝ আকাশেই ভরে নেওয়া যাবে জ্বালানি।
৮) ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা মিলবে ডাক্তার।
৯) আপৎকালীন সার্জারির জন্য সর্বাধুনিক অপারেশন থিয়েটার।
১০) ব্রডব্যান্ড, রেডিও ও টেলিকম যোগাযোগ ব্যবস্থা।
১১) ১৯টি টেলিভিশন সেট।
১২) অফিসিয়াল কাজকর্মের যাবতীয় জিনিস।
১৩) বিলাসবহুল শয়নকক্ষ ও এক্সিকিউটিভদের জন্য সর্বাধুনিক অফিস।