বালোচ নেতা ব্রাহামদা বুগটি। ছবি: টুইটার সৌজন্যে।
ঢিলের বদলে পাটকেল, হাফিজ সইদ ইস্যুতে এমন নীতিই নিতে পারে ভারত। জোর জল্পনা কূটনৈতিক মহলে। যে দিন পাকিস্তানের আদালত হাফিজ সইদকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, সে দিনই সুইৎজারল্যান্ডে খারিজ হয়ে গিয়েছে আর এক পাকিস্তানির রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন। তিনি ব্রাহামদা বুগটি, বালুচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষনেতা। ব্রাহামদা বুগটিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দিয়েছে পাকিস্তান, তাঁর বিরুদ্ধে জঙ্গি যোগের অভিযোগও তুলেছে। দীর্ঘ দিন ধরে দেশছাড়া বুগটিকে যাতে সুইৎজারল্যান্ডও আশ্রয় না দেয়, তার জন্য কূটনৈতিক ভাবে খুবই তৎপর হয়েছিল ইসলামাবাদ। তাতে ফল মিলেছে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু হাফিজ সইদকে যে ভাবে পাকিস্তান রক্ষা করছে, তার যোগ্য জবাব দিতে ব্রাহামদা বুগটিকে এ বার ভারত আশ্রয় দিতে পারে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এই গুঞ্জন নিঃসন্দেহে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে ইসলামাবাদের।
আরও পড়ুন: কী ভাবে হল ধর্ষণ, চার বছরের শিশু জানাল বিচারককে
ব্রাহামদা বুগটি বালোচ রিপাবলিকান পার্টির (বিআরপি) নেতা। পাকিস্তানের কবল থেকে বালুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে বহু বছর ধরে লড়ছে বুগটিদের দল। ১৯৪৮ সালে জোর করে বালোচিস্তানকে পাকিস্তানে সামিল হতে বাধ্য করেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু পাকিস্তানে সামিল হওয়ার পর বালুচিস্তানের আসল বাসিন্দাদের উন্নয়নের দিকে পাকিস্তান একেবারেই নজর দেয়নি বলে অভিযোগ। বরং অত্যাচার এবং বৈষম্যই সহ্য করতে হয়েছে বালোচদের। এ সবের প্রতিবাদেই পাকিস্তানের শাসন থেকে স্বাধীন হতে চায় বালুচিস্তান। কিন্তু চূড়ান্ত বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সে আন্দোলন ভেঙে দিতে সচেষ্ট পাকিস্তান। ব্রাহামদা বুগটির দল বিআরপি-কে পাক প্রশাসন নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন: চার বছরের ছেলে ‘যৌন’ নিগ্রহে অভিযুক্ত!
২০১০ সাল থেকেই সুইৎজারল্যান্ডে রয়েছেন বুগটি। সেখান থেকেই বালুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালাচ্ছেন। সে বছরই সুইৎজারল্যান্ড সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আবেদন বুগটি জানিয়েছিলেন। এত দিন ঝুলে ছিল আবেদনটি। দীর্ঘ বিবেচনার পর বুধবার সুইৎজারল্যান্ড জানিয়ে দিয়েছে, বুগটিকে তাঁরা আশ্রয় দেবে না।পাকিস্তান ও চিনের চাপের মুখে সুইৎজারল্যান্ড যে শেষ পর্যন্ত তাঁকে আশ্রয় দেবে না, তা বুগটি সম্ভবত আগেই আঁচ করেছিলেন। তাই ২০১৬ সালে ভারতের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন তিনি। নয়াদিল্লি সে আবেদন খারিজ করে দেয়নি। তবে আবেদনে এখনও সাড়াও দেয়নি। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষপদে বদল হওয়ার পরে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায়, তা বুঝে নেওয়ার জন্যই ভারত এত দিন ধরে ব্রাহামদা বুগটির আবেদনটি ঝুলিয়ে রেখেছিল বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। কিন্তু অপেক্ষাই সার। জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি নিয়ে খুব একটা ভাবিত নন বলেই ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মুম্বই হামলার মূল চক্রী হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের যে দাবি ভারত বার বার জানাচ্ছে, তাও পাকিস্তান পূরণ করবে না বলে বোঝা যাচ্ছে। এই অবস্থায় পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার কথা বিদেশ মন্ত্রক ভাবতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। ব্রাহামদা বুগটির আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার পথে এগোতে পারে নয়াদিল্লি। মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।