উদ্বিগ্ন দিল্লি ছবি: রয়টার্স।
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আফগানিস্তান সফরে গিয়েছিলেন। আশরফ গনি সরকারের কাছে তাঁর একটাই অনুরোধ ছিল— আফগানিস্তানে বন্দি আনাস হক্কানিকে জেরা করে ভারতে আইএসআই-এর হামলার ছক সম্পর্কে যে কোনও তথ্য মিললে, তা যেন দিল্লিকে পত্রপাঠ জানানো হয়। কারণ ২০০৮ ও ২০০৯-এ হক্কানি নেটওয়ার্ক আইএসআই-এর মদতেই আফগানিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের বিশ্বাস।
২০১৪-য় আনাস হক্কানিকে সিআইএ বাহরিন থেকে গ্রেফতার করলেওন তালিবানের হাতে বন্দি একজন আমেরিকান ও এক অস্ট্রেলীয় অধ্যাপকের মুক্তির বিনিময়ে ২০১৯-এ তাকে আফগানিস্তানের জেল থেকে ছেড়ে দিতে হয়। হক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন হক্কানির পুত্র ও বর্তমানে ওই সংগঠনের প্রধান সিরাজুদ্দিনের ভাই আনাসই দোহায় তালিবান সরকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। হামিদ কারজ়াইয়ের সঙ্গে বৈঠকে তাঁকেই প্রধান ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। আর তা দেখেই দিল্লির নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্তাদের রক্তচাপ বেড়েছে। তালিবান সরকারে হক্কানি নেটওয়ার্ক প্রধান ভূমিকায় উঠে এলে, তা ভারতের জন্য উদ্বেগের বলেই দিল্লি মনে করছে।
একই সঙ্গে জালালুদ্দিন, সিরাজুদ্দিন হক্কানি-সহ তালিবান ও হক্কানি নেটওয়ার্কের নেতাদের উপরে এত দিন রাষ্ট্রপুঞ্জের যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা এ বার আমেরিকার উদ্যোগে তুলে নেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ২০১১-তে রাষ্ট্রপুঞ্জে তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটি তৈরি হয়। সংগঠনের নেতাদের আর্থিক লেনদেন, অস্ত্র কেনাবেচা, যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। দিল্লি বরাবরই এই নিষেধাজ্ঞা কমিটিকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন আশঙ্কার কারণ হল, আমেরিকার সঙ্গে তালিবানের চুক্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি রয়েছে বলে খবর মিলছে।
সরকারি সূত্রের অবশ্য ব্যাখ্যা, আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি মানেই যে রাষ্ট্রপুঞ্জ হক্কানিদের উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেবে, এমন নয়। আমেরিকা, চিন একমত হলেও বাকিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নিষেধাজ্ঞা তোলার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি কর্তাদের আশা, আবদুল গনি বরাদর ও হক্কানিদের উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে আমেরিকা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের দেশগুলি তাদের থেকে কিছু আদায়ের চেষ্টাও করবে। অগস্ট মাসে নিরাপত্তা পরিষদ পরিচালনার ভার ভারতের হাতে থাকলেও গোটা বিষয়ে ভারতের কিছুই করার নেই।
ভারতের চিন্তা বাড়িয়ে তালিবান এখন কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব কার্যত হক্কানি নেটওয়ার্কের যোদ্ধাদের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশ স্টেশন, নিরাপত্তা বাহিনীর পরিকাঠামো সবই হক্কানিদের নিয়ন্ত্রণে। তারা এখনও পর্যন্ত কাবুলের নাগরিকদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করছে। বিশেষ করে তাজিক, হাজারা সম্প্রদায় ও মহিলাদের সঙ্গে তাদের ব্যবহারে কাবুলের নাগরিকরাও বিস্মিত। দিল্লির নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা মনে করছেন, হক্কানিরা সরকারে অংশ নেবে বলেই ভাবমূর্তি বদলাতে চাইছে। কিন্তু তাতে তাদের আসল চরিত্র বদলাবে না।
কেন হক্কানি নেটওয়ার্ক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এত মাথাব্যথা? সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, হক্কানি নেটওয়ার্ক তালিবানের সব থেকে লড়াকু বাহিনী। তালিবান নেতৃত্বের অংশ হলেও তারা অনেকাংশেই স্বাধীন। পাকিস্তানের সেনা ও আইএসআই-এর সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত হক্কানিরা বরাবরই লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মহম্মদের মতো সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেছে। গত সপ্তাহে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রাষ্ট্রপুঞ্জে তালিবানের সমালোচনা না করলেও হক্কানি নেটওয়ার্কের সক্রিয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।