ভারতীয় বায়ুসেনার অ্যাপাচে কপ্টার— ফাইল চিত্র।
সেনা ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার পরে পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) ‘ডিসএনগেজমেন্ট’ শুরু করেছে ভারত ও চিন। কিন্তু গালওয়ান কাণ্ডের পরে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না নয়াদিল্লি। তাই সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি বায়ুসেনার সেরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার (গানশিপ) এএইচ-৬৪ অ্যাপাচে মোতায়েন করা হচ্ছে লাদাখে।
গত মাসে পঞ্জাবের পাঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পাঁচটি অ্যাপাচের শেষ ব্যাচটি এসে পৌঁছেছে। কোভিড-১৯ বিধি মেনে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলি বায়ুসেনার কপ্টার বহরে যোগ দিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ওই পাঁচটি অ্যাপাচেকে পূর্ব লাদাখে পাঠানো হচ্ছে।
বায়ুসেনা সূত্রের খবর, এই অ্যাডভান্সড অ্যাটাক কপ্টার এক সঙ্গে ১২৮টি লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে পারে। যুগপৎ আঘাত হানতে পারে ১২টি। হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেটের পাশাপাশি অ্যাপাচেতে রয়েছে ৩০ এমএম অটোক্যানন। যা থেকে দু’মিনিটে ১,২০০ রাউন্ড গুলি ছোড়া যায়।
আরও পড়ুন: সংঘাতের জের, চিনের সঙ্গে ৯০০ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল করল হিরো সাইকেল
মার্কিন বোয়িং সংস্থার তৈরি ২২টি অ্যাপাচে-৬৪ অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার বিষয়ে ২০১০ সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন মনমোহন সিংহ সরকার। উদ্দেশ্য ছিল, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত সোভিয়েত জমানার এমআই-৩৫ অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলি ধাপে ধাপে সরিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনাকে দেওয়া হবে অ্যাপাচে। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে পাঠানকোটে বায়ুসেনার ১২৫ হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রনের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে অ্যাপাচে তুলে দেওয়া হয়েছিল। গত বছর মোট ১৭টি কপ্টার আমেরিকা থেকে এসে পৌঁছেছিল।
যুদ্ধ হেলিকপ্টারের সংখ্যার হিসেবে চিন এগিয়ে থাকলেও পিপলস লিবারেশন আর্মির বিমানবহরে ডব্লিউজেড-১০ কিংবা হারবিন জেড-১৯ কোনও ভাবেই অ্যাপাচের সমতুল্য নয়। শুধু যুদ্ধের উপযোগী আকাশযান নয়, লাদাখের দুর্গম এলাকাগুলিতে দ্রুত সেনা, অস্ত্র এবং রসদ পৌঁছে দিতে বোয়িং সংস্থারই তৈরি ভারী পরিবহণ হেলিকপ্টার সিএইচ-৪৭ চিনুক লাদাখে মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চিনের সেনা সরানো ৬২ সালের পুনরাবৃত্তি নয়তো! সতর্ক বাহিনী
সত্তরের দশকের রুশ হেভি লিফ্ট কার্গো হেলিকপ্টার এমআই-২৬-এর বদলি হিসেবেই চিনুকের আধুনিক সংস্করণ কিনেছে ভারত। পূর্ব লাদাখের জন্য অন্তত ১৫টি চিনুক মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে বায়ুসেনার। পাশাপাশি, লাদাখের উঁচু পাহাড় ঘেরা অঞ্চলগুলিতে দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রুশ এমআই-১৭ভি৫ মাল্টিরোল হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, মে মাসে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন সেক্টরে এলএসি পেরিয়ে চিনা ফৌজের ঢুকে পড়ার ঘটনা নজরে আসার পরেই জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাগোয়া বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলি থেকে দুর্গম সেনা শিবিরগুলিতে যোগাযোগের জন্য হেলিকপ্টারের সংখ্যা বাড়ানো শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি অ্যাপাচে-সমেত ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান ও কপ্টারগুলি লাদাখে রাতে ‘অপারেশনের’ মহড়াও দিয়েছে।