India-China

ম্যাপের লড়াই এ বার অ্যাপের উঠোনেও!

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের বক্তব্য, ভারতের ওই সিদ্ধান্তে তাঁরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০৪:২৬
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

লাদাখে চিনা সেনার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করাকে কেন্দ্র করে এত দিন একে অপরকে চোখ রাঙাচ্ছিল ভারত এবং চিন। টিকটক, ইউসি ব্রাউজার-সহ ৫৯টি মোবাইল অ্যাপ সোমবার কেন্দ্র নিষিদ্ধ করার পরে এ বার তা নিয়ে দিল্লির দিকে অভিযোগের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে শুরু করল বেজিং।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের বক্তব্য, ভারতের ওই সিদ্ধান্তে তাঁরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে বেজিং। ভারতে ব্যবসা করা চিনা সংস্থাগুলির অধিকার রক্ষার দায় যে দিল্লির, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। একের পর এক টুইটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতে চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র জি রং-ও। এমন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, গ্রাহক-স্বার্থ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের পরিপন্থী কি না, তুলেছেন সেই প্রশ্নও। পাল্টা জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের দাবি, মোদী সরকারের এই চিনা অ্যাপ বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে দেশ। এর দৌলতে আরও ভাল কাজে উৎসাহ পাবে ভারতীয় স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলি। এর পরে রাতে পিটিআই জানিয়েছে, রাতেই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে, ওই ৫৯টি চিনা অ্যাপকে অবিলম্বে বন্ধ করে দিতে।

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠছে, প্রথম মন্ত্রী হিসেবে জাভড়েকর তা-ও ‘চিনা অ্যাপ’ কথাটি উচ্চারণ করলেন। বাকিদের সেটুকু বলতেও দ্বিধা কেন? কেনই বা লাদাখে সীমান্ত-সংঘাত প্রসঙ্গে এখনও চিনের নামটুকু পর্যন্ত মুখে আনেননি নরেন্দ্র মোদী? অন্য দিকে শিল্পমহলের চিন্তা, বেজিং বাণিজ্যিক প্রত্যাঘাতের পথে হাঁটলে তা সামাল দেওয়া যাবে তো?

Advertisement

আরও পড়ুন: ১৬ মিনিট ৮ সেকেন্ড! চিন নিয়ে নীরব মোদী

এ দিন টুইটে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর দাবি, ইউপিএ-র তুলনায় এনডিএ জমানায় চিনের উপরে আমদানি-নির্ভরতা বেড়েছে অনেক বেশি। তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, যে সমস্ত অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হল, তারই একটির মাধ্যমে কিছু দিন আগে লাদাখে শহিদ হওয়া সেনাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী! কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের বক্তব্য, তথ্যের নিরাপত্তার খাতিরে চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা স্বাগত। কিন্তু তা হলে তো ‘নমো’ অ্যাপও বাতিল করতে হয়! অনেকের প্রশ্ন, চিনের সঙ্গে ঝামেলা তো শুরু হয়েছে বেশ কিছু দিন। তা হলে এত দিন সরকার সে পথে হাঁটেনি কেন? তা ছাড়া এই অ্যাপগুলি যে নিরাপদ নয়, তা চিনের সঙ্গে গোলমালের আগে সরকার বুঝতে পারেনি? কেনই বা ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিলে নেওয়া হয়েছে টিকটকের মতো চিনা সংস্থার অনুদান? সঙ্ঘের আর্থিক শাখা স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের অশ্বিনী মহাজনের অবশ্য দাবি, ওই অনুদানের পরেও টিকটককে নিষিদ্ধ করা থেকে স্পষ্ট যে, টাকার বিনিময়ে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নীতি এই সরকারে নেই।

আরও পড়ুন: টিকটক বাতিলে ক্ষতি কত, মাপছে স্টার্ট-আপ

এই তরজার মধ্যে শিল্পমহলের দুশ্চিন্তা জোগান-শৃঙ্খল ভেঙে পড়া নিয়ে। ইস্পাত-বিদ্যুতের মতো ভারী শিল্পের যন্ত্র, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বস্ত্রশিল্প, ওষুধের কাঁচামাল থেকে শুরু করে মোবাইল-ফ্রিজ-টিভির মতো বৈদ্যুতিন পণ্য ও তার যন্ত্রাংশ- হাজারো বিষয়ে এ দেশের শিল্প বহুলাংশে চিনের উপরে নির্ভরশীল। তাদের বক্তব্য, রাতারাতি এর বিকল্প বের করা শক্ত। আশঙ্কা, এখন যদি প্রত্যাঘাতের পথে হেঁটে ওষুধের কাঁচামালে শুল্ক বাড়ায় চিন? বাড়তি কর বসিয়ে দাম বাড়ায় সেখান থেকে আসা যন্ত্রাংশের? বন্দরে আসা কাঁচামাল দ্রুত ছাড়ার আর্জি এ দিনই জানিয়েছে ওষুধ শিল্প। শিল্পমহলের বক্তব্য, রাতারাতি পটবদলের চেষ্টা আত্মঘাতী হতে পারে।

জমজমাট সোশ্যাল মিডিয়াও। এক পক্ষের বক্তব্য, চিনা পণ্য নিপাত যাক। অন্য পক্ষের কটাক্ষ, লাদাখে চিনের জমি দখল আর ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পাল্টা শুধু অ্যাপ বয়কট!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement