India-China

বেজিংয়ের হুঙ্কার: ‘এক ইঞ্চি জমিও চিন ছাড়বে না’

মে মাসের গোড়া থেকে দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে এই প্রথম প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্তরে বৈঠক হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪৪
Share:

ছবি: পিটিআই।

আলোচনার টেবিলে তর্কাতর্কি হল। এবং লাদাখের পরিস্থিতিতে উন্নতির কোনও আশা দেখা গেল না। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দু’দেশের সেনার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থানই বহাল রইল। উপরন্তু, চিনের সেনা যে পিছু হটবে না, তার ইঙ্গিত দিয়ে প্রায় মহাভারতের দুর্যোধনের মতো বেজিং হুঙ্কার দিয়েছে, ‘চিন এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও অখণ্ডতা বজায় রাখতে চিনের সেনাবাহিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সক্ষম ও আত্মবিশ্বাসী।’

Advertisement

গত রাতে মস্কোয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফংহ-র সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দেন, ‘চিনা সেনাবাহিনীর কাজকর্ম, বিপুল সংখ্যায় বাহিনী জড়ো করা, আগ্রাসী আচরণ, একতরফা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বদলের চেষ্টা—এর সবই দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিরুদ্ধে।’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আজ বিবৃতিতে বলেছে, ‘দু’দেশের বিশেষ প্রতিনিধির মধ্যে বৈঠকে যে বোঝাপড়া হয়েছিল, চিনের সেনার কাজকর্ম তার সঙ্গেও খাপ খায় না।’ আর রাজনাথ বলেন, চিন যেন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলে এবং তাতে বদলের চেষ্টা না-করে। প্যাংগং লেক বা ১৭ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্টের মতো একাধিক জায়গায় চিনের সেনার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। ভারত চিনকে ওই সব এলাকা খালি করতে বলেছে।

উল্টো দিকে, বেজিংয়ে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, ওয়েই রাজনাথকে বলে দিয়েছেন, লাদাখে উত্তেজনার পিছনে সব দোষ ভারতের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের বৈঠকে যে সব সমাধান সূত্র বেরিয়েছিল, ভারতই তা লঙ্ঘন করছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্বামীর খোঁচার পরে মুখে কুলুপ নির্মলার

আরও পড়ুন: ব্যবসার সুবিধায় গুজরাতের আগে বঙ্গ

মে মাসের গোড়া থেকে দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে এই প্রথম প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্তরে বৈঠক হল। রাশিয়া আড়ালে থেকে দিল্লি ও বেজিংকে আলোচনায় বসাতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও দু’দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যে ভাবে দোষারোপ করেছে, তা দেখে মনে করা হচ্ছে, কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।

আজ কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, আলোচনা তো হচ্ছে। তার ফল কী হচ্ছে? ইউপিএ-জমানায় চিনের অনুপ্রবেশের সময়ে নরেন্দ্র মোদী গুজরাত থেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, মনমোহন সিংহ কবে চিনকে ‘লাল আঁখ’ দেখিয়ে কথা বলবেন? কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী কবে চিনকে লাল চোখ দেখাবেন?’’ সুরজেওয়ালার যুক্তি, মোদী জমানায় বিদেশমন্ত্রী স্তরে এক বার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দু’বার, রাষ্ট্রদূত স্তরে দু’বার, দু’দেশের মধ্যে যে ‘ওয়ার্কিং মেকানিজম’ রয়েছে, সেখানে চার বার এবং সেনার কোর কমান্ডার স্তরে পাঁচ বার বৈঠক হয়েছে। এ বার প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্তরেও বৈঠক হল। তাতে ফল কী হল?

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এর মধ্যে আশার কথা, প্রকাশ্যে চড়া সুর বজায় রাখলেও দু’পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। ভারত বলেছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় যত শীঘ্র সম্ভব উত্তেজনা প্রশমিত করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। দুই বাহিনীকে পরস্পরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়ানো অবস্থান থেকে সরে যেতে হবে। তার জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। বেজিংও বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণ পথেই সমস্যার সমাধানের কথা বলেছে।

‘সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন’ বা এসসিও-র বৈঠকের পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্তরের বৈঠকের পর আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বিদেশমন্ত্রী স্তরের বৈঠকও হবে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠকে যোগ দিতে মস্কো যাবেন। তিনি ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত করেছেন, তাঁর সঙ্গে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র আলাদা বৈঠক হতে পারে। ওয়াংয়ের সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট ভাল পরিচিতি রয়েছে বলেও জয়শঙ্কর জানিয়েছেন।

দিল্লির প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, মুশকিল আসলে অন্য জায়গায়। এর আগেও আলোচনার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, চিনের বিদেশমন্ত্রী বা সরকারের অন্য প্রতিনিধিরা ফোনে বা ভিডিয়ো কনফারেন্সে যে সব কথাবার্তা বলছেন, তার সঙ্গে লাদাখে চিনের সেনার কাজকর্ম মিলছে না। চিন পাকিস্তান নয়। কাজেই চিনের সেনা নিজের মতো চলছে, এমন বলা যায় না।

রাজনাথ শুক্রবারের বৈঠকে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন, ভারতের সেনা দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়েই চলেছে। যদিও চিন গালওয়ান উপত্যকায় দুই বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি এবং তার জেরে ভারতীয় জওয়ানদের মৃত্যুর জন্য নয়াদিল্লিকেই দায়ী করেছে। কিন্তু রাজনাথ প্যাংগং লেকে চিনের অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, চিনের উচিত, ভারতের সঙ্গে মিলে প্যাংগং লেকের মতো সংঘাতের এলাকায় উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement