লাদাখে ভারতীয় সেনার কনভয়— ফাইল চিত্র।
শুধুমাত্র শূন্যে গুলি চালানো নয়, সোমবার রাতে লাদাখের ব্যাংহং হুনানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়ে ভারতীয় সেনার ফরওয়ার্ড পোস্টে চড়াও হয়েছিল চিনা বাহিনী। সেনার একটি সূত্র জানাচ্ছে, শেনপাও হিলের ভারতীয় ঘাঁটি দখলের উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছিল ৫০ জনেরও বেশি চিনা সেনা। কিন্তু প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণের ওই এলাকায় অপেক্ষাকৃত উঁচু অবস্থানে থাকা ভারতীয় বাহিনী পাল্টা শূন্যে ‘সতর্কতা মূলক’ গুলি ছোড়ায় হামলাকারীরা পিছু হটে। যদিও ভারতীয় সেনা আজ গুলি ছোড়ার কথা স্বীকার করেনি।
লাদাখের এলএসি-তে গত চার মাসের টানাপড়েন পর্বে দ্বিতীয়বার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ‘খবর’ মিলেছে । আপাতত ঘটনাটি ‘সতর্কতা মূলক গুলি চালানো’য় সীমাবদ্ধ থাকলেও বিষয়টিকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকদের একাংশ। গত ১৫ জুন রাতে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকার পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-র কাছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হলেও কোনও পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। অগস্টের শেষ পর্বে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) অনুপ্রবেশের সময় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠলেও কোনও পক্ষই তার সত্যতা স্বীকার করেনি। ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছিল, পুরনো একটি মাইন ফেটে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের কমান্ডো নিমা তেনজিনের মৃত্যু হয়।
চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের অভিযোগ, সোমবার রাতে ভারতীয় সেনা একতরফা ভাবে এলএসি অতিক্রম করে এবং গুলি ছোড়ে। ভারতীয় সেনার তরফে অবশ্য ব্যাংহং হুনানের ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের কথা স্বীকার করা হয়নি। তবে এলএসি-তে চিনা ফৌজের বার বার প্ররোচনামূলক আচরণের কথা জানিয়ে সেনার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতীয় সেনা কখনওই এলএসি পেরোয়নি। কোনও পরিস্থিতিতে গুলিও ছোড়েনি।’’
আরও খবর: করোনাযুদ্ধ জেতার পর অর্থনীতি চাঙ্গা করতেও বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে চিন, দাবি শি-র
সেনার অন্য একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘কূটনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক স্তরে দু’দেশের মধ্যে আলোচনার মধ্যেও পিপল্স লিবারেশন আর্মি বেপরোয়া ভাবে চুক্তি ভঙ্গ করে আগ্রাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে। ৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় চিনা সেনা এলএসি-র কাছে ভারতীয় সেনা ফরওয়ার্ড পোস্টের কাছে চলে আসে। তবে চিনা বাহিনীরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ফিরে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে আমাদের সেনাকে ভয় দেখাতে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। তবে এত গুরুতর প্ররোচনা ও উস্কানি সত্ত্বেও আমাদের সেনা সংযত থেকেছে এবং পরিণত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে।’’
আরও খবর: ‘লাদাখের পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর’, প্রভাব ফেলবে সম্পর্কে, মস্কো বৈঠকের আগে বললেন জয়শঙ্কর
রাজাংলা হিল এবং গুরুং টপের মধ্যবর্তী ওই এলাকা সামরিক অবস্থানগত দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ অগস্ট ওই দুই শিখর-সহ এলএসি লাগোয়া সবগুলি উঁচু জায়গা ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে। ফলে লালফৌজের গতিবিধির উপর নজরদারিতে সুবিধা মিলছে। তাই চাপের মুখে পড়েই চিনা সেনা সোমবার রাত ৭ টা নাগাদ হামলা চালিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও পিএলএ-র ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র কর্নেল ঝাং শুইলি সরাসরি গুলি ছোড়ার ‘খবর’ অস্বীকার করেননি। তিনি আজ বলেন, ‘‘চুক্তি ভেঙে ভারতীয় সেনা এলএসি পেরিয়ে ঢুকে এসে গুলি চালানোর পরে আমাদের বাহিনীও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে।’’