লাদাখে এলএসি-তে মোতায়েন ভারতীয় সেনা। ফাইল চিত্র।
লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি)-য় উত্তেজনা কমাতে দ্রুত ‘মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনো’ (ডিসএনগেজমেন্ট)-র বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে রবিবারের সামরিক স্তরের বৈঠকে। সোমবার সরকারি বিবৃতিতে নবম দফার কোর কমান্ডার পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে ‘ইতিবাচক, বাস্তববাদী এবং গঠনমূলক’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নবম দফার বৈঠকের পরে দুই সেনার তরফে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্র। সেখানে ‘সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রগুলি’তে দ্রুত সেনা পিছিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের কথা বলা হয়েছে। সিকিমের নাকু লা সীমান্তে ভারত ও চিনা সেনার সঙ্ঘর্ষের পরেও নয়াদিল্লির এই অবস্থান ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন কূটনীতি ও সামরিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
সরাকরি বিবৃতি জানাচ্ছে, ‘উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে ধারাবাহিক আলোচনার পাশাপাশি দু’পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানকারী বাহিনীকে সংযত রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে। ‘সেনা সংখ্যা কমানো’ (ডিএসক্যালেশন)-র বিষয়টি দশম দফার বৈঠকে আলোচনা হবে’। বর্তমানে পূর্ব লাদাখে দু’পক্ষের প্রায় ৫০ হাজার করে সেনা মোতায়েন আছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর।
রবিবার দক্ষিণ-পূর্ব লাদাখে চুশুল লাগোয়া মলডো পয়েন্টে আয়োজিত বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন লেহ্র ১৪ নম্বর কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি জি কে মেনন। চিনা ফৌজের তরফে আলোচনায় অংশ নেন শিনজিয়াং মিলিটারি রিজিয়ন কমান্ডার, মেজর জেনারেল লিউ লিন।
গত ৬ নভেম্বর অষ্টম দফার বৈঠকে ডিসএনগেজমেন্ট এবং ডিএসক্যালেশন সংক্রান্ত তিনটি পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনও মতৈক্য হয়নি বলে সেনা সূত্রে খবর মিলেছিল। ওই বৈঠকে ভারতের তরফে দাবি তোলা হয়েছিল, প্যাংগং হ্রদের উত্তর তীরের ফিঙ্গার-৫ থেকে চিনা ফৌজ যেন ফিঙ্গার-৮ পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ফিঙ্গার-৮ পর্যন্ত টহল দিত ভারতীয় সেনা। কিন্তু এর পরে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এলএসি লঙ্ঘন করে ফিঙ্গার-৪ পর্যন্ত এগিয়ে আসে বলে অভিযোগ।
অন্যদিকে, চিনের তরফে ওই বৈঠকে প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে এলএসি বরাবর রেচেলা থেকে রেজিংলা পর্যন্ত উঁচু জায়গাগুলিতে অবস্থান নেওয়া ভারতীয় সেনাকে পিছনোর দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু কোনও পক্ষই ‘অবস্থান’ বদলাতে রাজি হয়নি বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ গত শনিবার বলেছিলেন, ‘‘এলএসি-তে মোতায়েন চিনা সেনার সংখ্যা কমানো না হলে ভারতও একতরফা ভাবে সেনা কমাবে না।’’
গত ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকে ডিসএনগেজমেন্ট এবং ডিএসক্যালেশন সংক্রান্ত পদক্ষেপের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। ৫ জুলাই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ইর ভার্চুয়াল বৈঠকের পরে পূর্ব লাদাখের কয়েকটি এলাকায় তা কার্যকরী হয়। কিন্তু প্যাংগং হ্রদের দুই তীর এবং দেপসাং এলাকায় এখনও চিনা ফৌজ পিছিয়ে যায়নি বলে সেনা সূত্রের খবর।
এরই মধ্যে উত্তর সিকিমের নাকু লায় গত ২০ জানুয়ারি অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে চিনা ফৌজ। অন্তত ২০ জন চিনা সেনা ওই সংঘর্ষে জখম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তারা শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হয়। জখম হয়েছেন ৪ ভারতীয় জওয়ানও। ভারতীয় সেনা ওই ঘটনাকে ‘মামুলি গোলমাল’ বলেছে।