প্রতীকী ছবি।
কৃষক বিক্ষোভে মোদী সরকারের দমন নীতির সমালোচনা করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আলোচনায় প্রবল ক্ষোভ জানাল ভারত। গত কালের ওই আলোচনার পর নয়াদিল্লিতে আজ ব্রিটেনের দূতকে তলব করে ভারতের প্রতিবাদের কথা জানিয়েছেন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
ব্রিটেনের হাউস অব কমন্স-এ প্রায় দেড় ঘণ্টার আলোচনায় দলমত নির্বিশেষে এমপি-রা ভারতে কৃষক বিক্ষোভ আটকাতে মোদী সরকারের দমন নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা দিতে ভারত সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য বরিস জনসন সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। এই বিতর্কের সূচনা করে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির মার্টিন ডে বলেছেন, ‘‘ব্রিটিশ সরকার আগেই জানিয়েছে, কৃষি সংস্কার ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ফলে এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। তবে বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। যে ভাবে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলছে এবং টিয়ার গ্যাস, জল কামানের ব্যবহার হচ্ছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। অনেক কৃষকই আত্মহত্যা করেছেন।’’ ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী নাইজেল অ্যাডামস আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থাকলেও ব্রিটেন এই উদ্বেগ গোপন রাখবে না। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী জনসন কয়েক মাসের মধ্যে ভারত সফরে যাচ্ছেন। তখন ভারতের নেতৃত্বের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন তিনি। অ্যাডামস অবশ্য জানিয়েছেন, কৃষি সংস্কার যে ভারতের নিজস্ব বিষয়, সেই অবস্থান থেকে ব্রিটিশ সরকার সরে আসেনি।
এই আলোচনার পরে, গত কাল রাতেই ব্রিটেনে ভারতের হাইকমিশনের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, ‘‘ই-পিটিশনের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যে আলোচনা করেছে, তা একতরফা। ওই পিটিশনে যে বিষয়গুলি তোলা হয়েছিল, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সব তরফের কথা না শুনে আলোচনা হয়েছে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট। তথ্যপ্রমাণ হাজির না করেই জোর করে অসত্য কিছু বিষয়কে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হয়েছে। দুনিয়ার বৃহত্তম গণতন্ত্রের উপর কালি ঢালার চেষ্টা হয়েছে।’’
এর পরে আজ নয়াদিল্লিতে বিদেশসচিব শ্রিংলা ব্রিটিশ দূতকে তলব করে তাঁর হাতে কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র তুলে দিয়েছেন। তাঁকে জানিয়েছেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই ধরনের আলোচনা অনভিপ্রেত। ভারত প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এ দিকে, সংযুক্ত কিসান মোর্চার তরফে আজ জানানো হয়েছে, সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাতে তারা নয় সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করেছেন বলে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে যে খবর সামনে এসেছে, তা ঠিক নয়। মোর্চা বলেছে, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের ভোটাররা যাতে কৃষক-বিরোধী বিজেপিকে ভোট না দেয়, তার জন্য তাঁদের নেতারা ওই রাজ্যগুলিতে ভোটের প্রচারে যাচ্ছেন। এই রাজ্যগুলিতে ১২ মার্চ থেকে তিন দিন ধরে কৃষক নেতাদের কর্মসূচি রয়েছে। কৃষক সংগঠনের পক্ষে আরও জানানো হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালীন এখনও পর্যন্ত ২৮০ জনেরও বেশি কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। টিকরি সীমানায় আজই ৫০ বছর বয়সি হরিয়ানার এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।