Russia Ukraine War

Russia-Ukraine war: রাশিয়া প্রশ্নে এক সুর ভারত-পাকিস্তানের

সবেতেই যুযুধান ভারত এবং পাকিস্তান। কিন্তু রাশিয়ার প্রশ্নে দু’টি দেশকে একই অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২২ ০৫:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হোক বা আন্তর্জাতিক স্তরে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা— সবেতেই যুযুধান ভারত এবং পাকিস্তান। কিন্তু রাশিয়ার প্রশ্নে দু’টি দেশকে একই অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর কারণ মস্কোর প্রতি পাকিস্তানের আনুগত্য সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন কারণে বেড়েছে। ভারতেরও পুরনো মিত্র মস্কো। রযেছে বিপুল প্রতিরক্ষা নির্ভরতাও। ফলে পুতিন সরকারের নিন্দায় যেমন অপারগ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সে ভাবে নরেন্দ্র মোদীও। ভারসাম্যের এই কূটনীতি, পরমাণু শক্তিধর দু’টি দেশকেই অবলম্বন করতে হচ্ছে।

Advertisement

রবিবার পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মামুদ কুরেশি কথা বলেছেন ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দমিত্রি কুলেবার সঙ্গে। হিংসা বন্ধের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারত যে ভাষায় এই নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়ান নেতৃত্বের কাছে যে বার্তা দিয়েছেন, তার সঙ্গে অবিকল মিল রয়েছে পাকিস্তানের বিবৃতির। মোদীর সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ফোনে কথা হওয়ার পর বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলে, ‘প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধ করা এবং আলোচনার পথে ফিরে আসার জন্য আবার ডাক দিয়েছেন। যে কোনও শান্তি প্রক্রিয়ায় ভারত যে অংশ নিতে ইচ্ছুক সে কথাও জানিয়েছেন। দু’দিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও এই একই কথা জানিয়েছিলেন মোদী।’

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর দিনই ঘটনাচক্রে মস্কোয় হাজির ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। দু’দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত গ্যাস পাইপলাইনের একটি মেগা প্রকল্প, বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয় এবং আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ইমরান সে দেশে গিয়েছিলেন বলে জানানো হয়েছে। সে সময়ই পাকিস্তান সতর্ক বিবৃতি দেয়, ইউক্রেনের বিষয়টিকে কার্যত এড়িয়ে গিয়ে। শুধু বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতি খুবই দুঃখজনক। বলা হয়, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই সংঘর্ষে কারও হিত হবে না। কোনও সংঘর্ষ হলে উন্নতিশীল দেশগুলির অর্থনীতির উপর সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে। তিনি জানিয়েছেন, আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে যে কোনও সংঘাতের সমাধান করা যায়।’

Advertisement

ভারতের রাশিয়ার উপর নির্ভরতা বহু প্রাচীন ঠিকই, কিন্তু দেখা যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বেড়েছে। স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর সমীক্ষা বলছে, রাশিয়ার মোট অস্ত্র রফতানির ২৩ শতাংশ গিয়েছে ভারতে, ২০১৬ থেকে ২০২০-র মধ্যে। একইভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেড়েছে। ঠান্ডা যুদ্ধের সেই দিন আর নেই যেখানে আফগানিস্তানে রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে লড়াইযের জন্য, পাকিস্তান ছিল আমেরিকার অন্যতম প্রধান মিত্র। ইমরান খানের সাম্প্রতিক সফরটিও ছিল প্রায় দু দশক পর কোনও পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর। এর আগে শেষবারের মতো ২০১১ সালে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আসিফ আলি জারদারি রাশিয়া গিয়েছিলেন।

রাশিয়া পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও সংযুক্ত করছে প্রস্তাবিত ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার লম্বা গ্যাস পাইলাইন। ২০১৫ সালে এই প্রকল্পটির আলোচনা শুরু হয়। ২১ সালে নতুন করে চুক্তি হয় দু দেশের মধ্যে। প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের এই পাইপলাইন বছরে ১২.৪ বিলিয়ন কিউবিক মিটার প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিতে সক্ষম। সূত্রের খবর, রাশিয়া পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে তাদের দেওয়া গ্যাস কিছুটা পকিস্তানের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে এই পাইপ লাইনের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে গ্যাসের প্রশ্নে ইউরোপের নির্ভরতা আরও বাড়বে রাশিয়ার উপর। পাশাপাশি সাংঘাই কোঅপারেশনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সংযোগ বেড়েছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এশিয়ায় ভারতের মতো দেশের মতামত বা অবস্থান নিঃসন্দেহে আম্তর্জাতিক স্তরে মান্যতা পায়। কিন্তু পাকিস্তান এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করল তাতে রাশিয়া বা ইউরোপের আপাতভাবে কিছু যায় আসার কথা নয়। কিন্তু পাকিস্তানের রাশিয়ার প্রতি ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার প্রতীকি গুরুত্ব রয়েছে যথেষ্ট। পশ্চিমের সঙ্গে পাকিস্তানের কৌশলগত সম্পর্কের প্রশ্নে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হবে এর ফলে। আমেরিকার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দরকষাকষির প্রশ্নে পাকিস্তান যে মস্কোর তাস খেলতে শুরু করবে, এই ঘটনায় সেটাও প্রমাণ হল বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement