সর্দার পটেলের মূর্তি উন্মোচন করলেন মোদী। ছবি: পিটিআই।
গুজরাতের মুখ্যন্ত্রী থাকাকালীন সর্দার বল্লভভাই পটেলের এই মূর্তি তৈরির স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। বুধবার সেই স্বপ্ন সাকার হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বলেন, “গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আমরা এই প্রকল্পের ভাবনা শুরু করেছিলাম।” এই মূর্তি উন্মোচনের ফলে এক দিকে যেমন প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন সাকার হল, একই সঙ্গে ভারত পেল বিশ্বের উচ্চতম মূর্তি।
‘লৌহ মানব’ সর্দার পটেলের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর সুবিশাল মূর্তি উন্মোচন করে আবেগে ভাসলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ভারতের ইতিহাসে দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।” উন্মোচনের পরই মূর্তির উপরে পুষ্পবৃষ্টি করে দু’টি এমআই হেলিকপ্টার।
গুজরাতের কেড়ওয়াড়িতে নর্মদা নদীর তীরে ১৮২ মিটার উচ্চতার সর্দার পটেলের এই মূর্তিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’। ২৯৯০ কোটি টাকা খরচ করে মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। ২০১৪ থেকে মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হয়। মূর্তিটির নকশা তৈরি করেছেন পদ্মভূষণ প্রাপ্ত স্থপতি রাম ভি সূতর। এটি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে ৫৭০০ মেট্রিক টন স্টিল, ২২,৫০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট, ১৮,৫০০ টন স্টিল রড এবং ১৮.৫ লক্ষ কেজি ব্রোঞ্জ ক্ল্যাডিং। মূর্তির ১৫৩ মিটার উচ্চতায় রয়েছে গ্যালারি। ২০০ জন একসঙ্গে যেতে পারবেন।
এ দিন সকালেই কেড়ওয়াড়ি পৌঁছে যান মোদী। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এছাড়াও গুজরাতের শীর্ষ বিজেপি নেতারাও এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।
মূর্তি উন্মোচনের পর সর্দার পটেলের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন মোদীর
মূর্তি উন্মোচনের পর মোদী বলেন, “আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আজ।এই দিনটা ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশবাসীর প্রতিনিধি হয়ে সর্দার পটেলের মূর্তি উন্মোচনের সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।” আর এই মূর্তিই প্রমাণ করে দিল যে ভারত ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রযুক্তির দিক থেকে কতটা প্রগতিশীল হয়েছে। স্ট্যাচু অব ইউনিটির উদ্বোধনের পাশাপাশি এ দিন ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস’-এর উদ্বোধন করেন মোদী।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্নের প্রকল্প নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, ঐক্যের নামে এই উচ্চতার দৌড় কেন? সাড়ে চার বছর ধরে মোদী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্লোগান তুললেও পটেলের মূর্তির বড় অংশ কিন্তু বানিয়ে আনতে হয়েছে চিন থেকে। ক’দিন আগেও শ’তিনেক চিনা কর্মী গুজরাতে এই মূর্তির কাজ করছিলেন। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নয়, মূর্তিটি ‘মেড ইন চায়না’! মূর্তি নিয়ে বিরোধিতা হয়েছে গুজরাতের অন্দর থেকেও। যেখানে মূর্তিটি তৈরি হয়েছে, সেই এলাকায় আদিবাসীদের বাস। পরিবেশ ও তাঁদের বাসস্থানের প্রশ্ন তুলে সর্দার পটেলের মূর্তির বিরেধিতা করেন। বিক্ষোভ-প্রতিবাদও হয়। এ দিন যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তাই আগে থেকেই গোটা এলাকা নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়।
আরও পড়ুন: ঐক্যের মূর্তি নিয়ে থামছে না বিতর্ক
আরও পড়ুন: এই মূর্তি তৈরির টাকায় হতে পারত ছ’টা মঙ্গল অভিযান!