এই ট্রাকই ধাক্কা মারে নির্যাতিতার গাড়িতে। —ফাইল চিত্র।
কয়েক ঘণ্টাও আগেও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল নম্বর প্লেট। কিন্তু ‘দুর্ঘটনা’র আগে তার উপর লেপে দেওয়া হয় কালি! উন্নাও-কাণ্ডের তদন্তে এ বার উঠে এল নয়া তথ্য।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার উন্নাও থেকে রায়বরেলী যাওয়ার পথে গুরবক্সগঞ্জে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের গাড়িতে ধাক্কা মারে উল্টো দিক থেকে ছুটে আসে একটি ট্রাক। ওই দিন ভোর ৫টা ২০ মিনিট নাগাদ ‘দুর্ঘটনা’স্থল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে, লালগঞ্জ টোল প্লাজা পেরোয় সেটি। তখন নম্বর প্লেটের উপর কোনও কালি ছিল না। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল রেজিস্ট্রেশন নম্বর। তা হলে ওই লম্বর প্লেটে কালি লেপা হল কখন? এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
গাড়ির নম্বর প্লেটে কালি লেপা নিয়ে এর আগে তদন্তকারীদের অন্য যুক্তি দিয়েছিলেন ট্রাক মালিক দেবেন্দ্রকিশোর। তিনি দাবি করেন, কানপুরের বেসরকারি অর্থনৈতিক সংস্থা ‘ওরিক্স লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিডেট’-এর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ট্রাকটি কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ে কিস্তির টাকা মেটাতে পারেননি। সংস্থার এজেন্টদের এড়াতেই নম্বর প্লেটের উপর কালি লেপে দিয়েছিলেন।
ট্রাকের চালককে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। —ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন: গুজবে কান দেবেন না, রাজ্যে শান্তি বজায় রাখুন, আহ্বান জানালেন জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল
যদিও আগেই দেবেন্দ্রকিশোরের দাবি খারিজ করে দেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অর্থনৈতিক সংস্থার এক এজেন্ট। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘‘আমরা কোনও ভাবে চাপ দিইনি ওঁকে। আমাদের কাছ থেকে মোট তিনটি গাড়ি কিনেছিলেন দেবেন্দ্রকিশোর। যার মধ্যে একটি গাড়ির টাকা মিটিয়েও দেন সম্প্রতি। বাকি দু’টির কিস্তি নির্ধারিত সময়েই দিচ্ছিলেন। নম্বর প্লেট কালি দিয়ে মুছে ফেলার পিছনে নিশ্চয়ই অন্য কারণ ছিল।’’
লালগঞ্জ টোল প্লাজা থেকে বেরনোর পর রাজঘাটের সোহরাবে একটি একটি নির্মাণ সংস্থায় বালি পৌঁছে দিয়েছিল ট্রাকটি। তার পর ফতেপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। তখনই নম্বর প্লেটের উপর কালি লেপে দেওয়া হতে পারে বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের। রায়বরেলীর পুলিশ সুপার সুশীলকুমার সিংহ বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে, টোল প্লাজা থেকে বেরনোর পরেই নম্বর প্লেটের উপর কালি লেপে দেওয়া হয়। কী কারণে কালি লেপা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: মলদ্বীপের আটক হওয়া প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতিকে ছেড়ে দিল ভারত
গত রবিবার রায়বরেলী যাওয়ার পথে উন্নাওয়ের নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের গাড়িতে ধাক্কা মারে উল্টো দিক থেকে ছুটে আসা ওই ট্রাকটি। তবে এই ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মানতে নারাজ নির্যাতিতার পরিবার। তাদের দাবি, গত বছর রাজ্যের প্রভাবশালী বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন নির্যাতিতা। এর পর দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। তাতে বাধ্য হয়ে কুলদীপ সেঙ্গার, তাঁর ভাই এবং আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু সেই থেকে লাগাতার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল গোটা পরিবারকে। মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তা না করাতেই, ষড়যন্ত্র কষে গাড়িতে ধাক্কা মারা হয়েছে।
এই ‘দুর্ঘটনা’র তদন্তভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হয়েছে। দু’সপ্তাহের মধ্যে তাদের তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।