প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় দফার সরকারের বিদেশনীতির কেন্দ্রে ছিল পশ্চিম এশিয়ায় আরব রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে চলা। প্রশ্ন উঠছিল, এই পদক্ষেপ করতে গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভারতের মনোযোগ হারিয়েছে। এখন কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এনডিএ সরকারের তৃতীয় দফায় নিকটবর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে জটিলতা নিরসনের পাশাপাশি মোদীর নীতির অগ্রাধিকারে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ইতিমধ্যেই যা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
নরেন্দ্র মোদীর সদ্যসমাপ্ত ব্রুনেই এবং সিঙ্গাপুর সফর এই লক্ষ্যেই একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু পূর্ব এশিয়ার কূটনীতিই নয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্য ও রণনীতির প্রশ্নেও এই সফর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এনডিএ সরকারের তৃতীয় দফায়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ ব্রুনেই এবং সিঙ্গাপুর সফরের ঠিক আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই দেশ মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের দুই প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি সফর করেছেন। গত মাসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সফর করেছেন ফিজি। সাম্প্রতিক অতীতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই অঞ্চলে একাধিক সফর করেছেন এবং নয়াদিল্লিতে স্বাগত জানিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মন্ত্রীদের। এই সফরগুলি থেকে যে কূটনৈতিক গতি তৈরি হয়েছে, তা আগামী মাসে লাওসে আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ভারতের বার্ষিক বৈঠকে কাজে লাগিয়ে কিছু বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। ওই বৈঠকে যোগ দিতে লাওস যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৪ সালে মোদী প্রথম দিল্লির তখতে এসে আগের ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে বদলে দিয়ে আরও সক্রিয়তার বার্তা দিয়েছিলেন। তার নাম হয় ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি। ২০১৮ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় আসিয়ানভুক্ত সমস্ত রাষ্ট্রনেতাকে। এরপর সংঘাতের পরিস্থিতি আরও তীব্র হয় আমেরিকা–চিন দ্বন্দ্ব বৃদ্ধিতে এবং চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যা গভীর হওয়ার পরে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর সফরে মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভারত এবং কোয়াডভুক্ত চতুর্দেশীয় গোষ্ঠী আলাদা আলাদা ভাবে ‘আসিয়ান’-এর পাশে রয়েছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোর মূল স্তম্ভ হিসাবে ‘আসিয়ান’কেই গণ্য করে ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া (কোয়াড)। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, ভারতের সঙ্গে আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির পথও সুগম হয়েছে তাঁর এই সফরের পরে।