কাল পাঁচ মিনিট। আজ তা বেড়ে দাঁড়াল এক ঘণ্টা।
কাল লোকসভায় মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দেওয়ার পর বিরোধীরা শোরগোল তুলে প্রধানমন্ত্রীকে আজ রাজ্যসভায় আনতে বাধ্য করল বটে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য নির্ধারিত এক ঘণ্টার বেশি তাঁকে রাখা গেল না। প্রধানমন্ত্রী নোট-বিতর্কে অংশ নেবেন, এই শর্তেই বিরোধীরা আলোচনা শুরু করে। এই এক ঘণ্টাতেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর দিকে ধেয়ে আসা বক্তব্য শুনলেন, কৌতুকে হাসলেনও। পরে আক্রমণাত্মক মনমোহন সিংহের কাছে গিয়ে হাত মেলালেন, কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গেও কথা বললেন। কিন্তু আর ফিরে এলেন না রাজ্যসভায়। তবে তাঁকে পাশে নিয়ে অরুণ জেটলি জানালেন, নোট বাতিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
গত কাল বিরোধীরা সংসদের বাইরে যে মহামঞ্চ তৈরি করেছিল, আজ সেই ঐক্যের ছাপ পড়ল সংসদের ভিতরেও। প্রধানমন্ত্রী যখন ‘ভাঙবেন, তবু মচকাবেন না’ মনোভাব নিলেন, একজোট বিরোধীরা স্পষ্ট করে দিল— প্রধানমন্ত্রী নেই তো আলোচনাও নয়। ফলে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর আর সংসদ চলতেই পারল না। নোট বাতিল নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে বিস্তর। কিন্তু এই মুহূর্তে মানুষের ভোগান্তিকে সামনে রেখে বিরোধীরা যে মোদী-বিরোধিতায় একজোট, তা দেখিয়েই সরকারকে যতটা সম্ভব কোণঠাসা করে দিল তারা। নরেন্দ্র মোদীর পিঠ দেওয়ালে ঠেকাতে এক দিকে সীতারাম ইয়েচুরিরা অবমাননার নোটিস দিলেন, অন্য দিকে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মারা দিলেন অধিকার ভঙ্গের নোটিস।
ফলে পরিস্থিতি যা দাঁড়াল, তাতে বিরোধী ঐক্যই এখনও পর্যন্ত সংসদ চলা বা না-চলার নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াল। এই অচলাবস্থার জট ছাড়াতে ছ’টি বিরোধী দলের নেতাদের আজই বৈঠকে ডেকেছিলেন রাজনাথ সিংহ। কিন্তু সে বৈঠক বয়কট করে আজ সকালে একজোট বিরোধী দল স্থির করে, সোমবারের ‘আক্রোশ দিবস’-এর আগে সরকারের সঙ্গে কোনও কথা নয়। তার পর স্থির হবে, রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার দিন-ক্ষণ। মোদীকে চাপের মুখে দেখে বিরোধীরা এই যৌথ আন্দোলনকে যতটা সম্ভব দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।
এককাট্টা বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে সরকারকেও এখন এই বলে সাফাই দিতে হচ্ছে— কোথায় নিয়ম আছে প্রধানমন্ত্রীকে সারা দিন সংসদে বসে থাকতে হবে? কংগ্রেসের পাল্টা প্রশ্ন, টু-জি কেলেঙ্কারির পর এ ভাবেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চাপ দিয়ে গোটা দিন অধিবেশনে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তার পর ঘোষণা করতে হয়েছিল যৌথ সংসদীয় কমিটি। এ বারও তা হবে। প্রধানমন্ত্রী আজ সারা দিন সংসদ ভবনেই ছিলেন, তবে তাঁর নিজের দফতরে। বিরোধীদের প্রশ্ন— অধিবেশনে আলোচনার সময়ে কেন তিনি আসবেন না?
মন্ত্রীরা পরে বলেন, এমন একটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তো বলতেই আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে অরুণ জেটলি তো সেই ঘোষণাই করেছেন। কিন্তু বিরোধীদের শর্তে সেটা কেন হবে? অতীতে মনমোহন সিংহকে বিজেপি বসিয়ে রেখেছিল বলেই কি কংগ্রেস এখন বদলা নেবে? জেটলি বলেন, ‘‘মনমোহনের সময় অর্থনৈতিক পঙ্গুত্ব ছিল। দুর্নীতি দমনের সাহস তাঁর ছিল না। যখন স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বিতর্কে অংশ নেবেন, তার পরেও আলোচনা ভন্ডুল করতেই বিরোধীরা নানা অজুহাত দিচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, আসলে কৃত্রিম আক্রোশ তৈরি করে বিরোধীরা ‘আক্রোশ দিবস’ পর্যন্ত গড়িমসি করতে চাইছে।
কিন্তু নোট বাতিলে মানুষের ভোগান্তিকে পুঁজি করে মোদীকে যতটা সম্ভব চাপে ফেলাই এখন বিরোধীদের লক্ষ্য। লোকসভায় সমাজবাদী পার্টির এক সাংসদ অক্ষয় যাদব স্পিকারকে লক্ষ্য করে কাগজ ছোঁড়েন। বিরোধীরা বলছেন, অন্য সময় হলে এই কারণে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হতো। কিন্তু সরকার চাপে আছে বলেই স্পিকার ওই সাংসদকে শুধু সতর্ক করে ছেড়ে দেন। মায়াবতী বলেন, ‘‘অ্যাপ সমীক্ষায় ৯৩ শতাংশ মানুষের সমর্থন দেখানো গোটাটাই একটা চালাকি। প্রধানমন্ত্রীর সাহস থাকলে লোকসভা ভেঙে দিয়ে জনমত নিন।’’