ইসরোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিধি। ফাইল চিত্র
চন্দ্রযানের রুদ্ধশ্বাস অবতরণ দেখতে রাতদুপুরে টিভির পর্দায় চোখ আটকে বসেছিলেন তিনসুকিয়ার শ্যামাপল্লির বাসিন্দা দীপক দেব ও তাঁর স্ত্রী শিখা দেবী। ক্যামেরা ঘুরছে বিজ্ঞানীদের গম্ভীর মুখের উপর দিয়ে। হঠাৎই এক মহিলার মুখ দেখে চমকে উঠলেন দীপকবাবু! বউমা না! অপেক্ষা, ফের কখন দেখা যাবে পুত্রবধূর ঝলক। আবারও বউমা। এ বার খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে! তত ক্ষণে অবশ্য নেমে এসেছে হতাশা। নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে ‘বিক্রম’। উত্তেজনা চেপেই শুয়ে পড়লেন দেব দম্পতি। পর দিন সকালে বউমা নিধি শর্মা নিজেই ফোন করলেন, “বাবা আমাদের মিশন অল্পের জন্য ফেল করে গেল!”
তিনসুকিয়ার দীপকবাবু অরুণাচল সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। বেঙ্গালুরুবাসী ইঞ্জিনিয়ার ছোট ছেলের শখ নাটক। থিয়েটার ওয়ার্কশপের সূত্রেই পরিচয় দিবাকর-নিধির। গত বছর ডিসেম্বরে দিবাকর বাড়িতে জানায়, তাঁরা ঘর বাঁধতে চায়। নিধিদের বাড়ি শিলচরে হলেও তাঁরা সপরিবারে দিল্লিরই বাসিন্দা। বিজ্ঞানী, বাঙালি বউমা পেয়ে কোনও আপত্তিই করেননি দেব দম্পতি। চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি বিয়ে হয়।
বৌভাত হয় তিনসুকিয়ায়। দীপকবাবু জানান, বউমা ইসরোয় কাজ করে শুনেছিলাম। সেখানে তো কত লোকই কাজ করে। বেঙ্গালুরুতে গিয়ে দেখি, অফিস থেকে এসে আম বাঙালি বউদের মতোই ঘর সামলাচ্ছে। কাঁধে যে এত দায়িত্ব কখনও বুঝতে দেয়নি।
আরও পড়ুন: জুয়ার ধার মেটাতে হাতালেন ৩৮ কোটি টাকা! ধৃত গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট
‘শ্যামাপল্লির বউমা’ যে চন্দ্রযানে শামিল, এখন তা জানাজানি হওয়ায় সাড়া পড়ে গিয়েছে তিনসুকিয়ায়। চন্দ্রযান দেখতে গিয়ে টিভিতে বউমার মুখ দেখে গর্বিত শিখাদেবী বলেন, “বউমার জন্য আমার মোবাইল অভিনন্দনে ভরে যাচ্ছে।” দীপকবাবু বলেন, “ল্যান্ডিংয়ের আগে কয়েক দিন ফোন করছিল না। ভাবতে পারিনি এই নিয়ে ব্যস্ত! ফোনে ব্যর্থতার কথা বলতে গিয়ে নিধি কেঁদে ফেলে।”
আরও পড়ুন: স্নানের ভিডিয়ো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল, ধর্ষণ, চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ সেই তরুণীর
হতাশ যোরহাটের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দেবলীনা হাজরিকাও। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিক্রমের অবতরণ দেখতে সেও ইসরোয় হাজির ছিল। কিন্তু ল্যান্ডিং বিফল, ফলে বাতিল হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের অনুষ্ঠানও। শুধুই এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগ হল।
আজ বিকেলে গুয়াহাটি ফিরে দেবলীনা জানায়, ৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় ইসরোতে ঢুকেছিলাম। বিক্রমের সঙ্গে যখন যোগাযোগ ছিন্ন হল ইসরোর ভিতরে তখন আমরা, ছাত্রছাত্রীরাও ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছিলাম। লাভ হল না।” সুযোগ পেলে কী প্রশ্ন করত সে? মনমরা দেবলীনা জানায়, বাচ্চাদের জন্য নকল স্পেস সেন্টার খোলার আর্জি জানাতাম। যেখানে থাকবে ‘জিরো গ্রাভিটি রুম’, ‘স্পেসশিপ কন্ট্রোল রুম সিম্যুলেটর’। আর বলতাম, সেই স্পেস সেন্টার যেন উত্তর-পূর্বেই প্রথম খোলা হয়।