ছবি: সংগৃহীত।
রাজধানীর বাতাসের মান ‘বিপজ্জনক’ থেকে কমে হল ‘অত্যন্ত খারাপ’।
দীপাবলির পরে দিল্লির কোনও কোনও এলাকায় বায়ুদূষণের সূচক ন’শোর ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিল বেসরকারি সংস্থা। রবিবার রাজধানীতে সেই সূচকই নেমেছে ৩৮৬ অঙ্কে। সূচকের অবস্থান অনুযায়ী, এই পরিস্থিতিকে বলা হচ্ছে ‘অত্যন্ত খারাপ’। অর্থাৎ দূষিত বায়ুতেই শ্বাস নিচ্ছেন রাজধানীবাসী। শ্বাসকষ্টের রোগীও বাড়ছে বলে দিল্লির চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এ দিন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বলেছে, দিল্লির পাশাপাশি দেশের আরও ২২টি শহরে বাতাসের মান এখন ‘অত্যন্ত খারাপ’।
‘সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ’-এর বুলেটিন বলছে, দিন দুয়েকের মধ্যে আরও কিছুটা উন্নতি হতে পারে দিল্লির পরিস্থিতির। কারণ, বাতাসের গতি মন্থর হচ্ছে। ফলে আশেপাশের রাজ্য থেকে ফসলের গোড়া পোড়ানোর ধোঁয়া দিল্লিতে ঢুকবে কম। নয়ডা ও গুরুগ্রামের পরিস্থিতি অবশ্য রাজধানী অঞ্চলের চেয়েও অনেকটা বেশি উদ্বেগজনক। এ দিন নয়ডায় বায়ুদূষণের সূচক রয়েছে ৫৩৬ অঙ্কে, পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘বিপজ্জনক’। গুরুগ্রামের অবস্থা ‘মারাত্মক’— ৪২৩ অঙ্ক।
গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, সোনীপত এবং ঝাজ্জরের মতো রাজধানী-লাগোয়া চারটি জেলায় বুধবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হরিয়ানা সরকার। রাস্তা ঝাঁট দেওয়া, নির্মাণকাজ, ফসলের গোড়া পোড়ানো এবং পুরসভার আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই চার জেলায়। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলিকে বলা হয়েছে, তাদের কর্মীরা যেন বাড়ি থেকেই কাজ করেন। ধুলো কমাতে জল ছেটানো হচ্ছে হরিয়ানার রাস্তায়।
দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার অবশ্য ইতিমধ্যেই এই সমস্ত পদক্ষেপ করেছে। আগামিকাল থেকে দিল্লির স্কুলগুলির ক্লাস অনলাইনেই হবে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা চলছে, সেগুলি বাদ দিয়ে সমস্ত স্কুল ও গ্রন্থাগার আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। যাবতীয় নির্মাণকাজ বন্ধ থাকবে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত। দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার পরামর্শ, দূষণ কমাতে মাসে অন্তত একটা দিন ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে সাইকেলে কিংবা বাসে যাতায়াত করুন শহরবাসী। এ দিন পটপরগঞ্জে একটি সাইকেল মিছিলের উদ্বোধন করে সিসৌদিয়া বলেন, ‘‘এই কর্মসূচিকে আমরা দিল্লির প্রতিটি কোণায় পৌঁছে দিতে চাই। দূষণ কমানোর সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব সরকারের, তার পরে শিল্পক্ষেত্রের এবং সব শেষে সাধারণ মানুষের। ভবিষ্যতের জন্য পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে মাসে অন্তত একটা দিন আমরা সাইকেল ব্যবহার করতে পারি।’’ দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই জানিয়েছেন, বায়ুদূষণ কমানোর লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপগুলি যথাযথ ভাবে কার্যকর করার লক্ষ্যে নির্দেশিকা জারি করেছে তাঁর দফতর। দূষণ কমাতে দিল্লিতে ফের লকডাউনের মতো কোনও পদক্ষেপ করা যায় কি না, সরকারকে গত কাল তা খতিয়ে দেখতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। রাই জানিয়েছেন, কী ভাবে লকডাউন কার্যকর করা যায়, সেই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আগামিকাল সুপ্রিম কোর্টে জমা দেবে দিল্লি সরকার।
এ দিকে, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, দিল্লি, নয়ডা, গাজ়িয়াবাদ, বুলন্দশহর, বাগপত, অঙ্কলেশ্বর-সহ দেশের ২৩টি শহরের বাতাসের মান গত ২৪ ঘণ্টায় ‘অত্যন্ত খারাপ’ হয়েছে। জয়পুর, উদয়পুর, জিন্দ, কোটা, মানেসর-সহ আরও অন্তত ১৩টি শহরে তিনশোর উপরে রয়েছে বায়ুদূষণের সূচক।