দু’টি ডোজ়ে এক বছর প্রতিরোধ, জানালেন সৌম্যা
প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নিলে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় এক বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকছে বলে জানালেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন। একই সঙ্গে তাঁর সতর্কবাণী, অনেক দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়ছে। মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার টিকা নেওয়া।
এক বছর আগে এই সময়ে আমেরিকা-ব্রিটেনে শুরু হয়ে গিয়েছিল টিকাকরণ প্রক্রিয়া। ধীরে ধীরে অন্য দেশ টিকাকরণের পথে হাঁটে। সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর দু’টি প্রতিষেধক নিয়েছেন, এমন জনসংখ্যার ক্ষেত্রে করোনা-প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় এক বছর স্থায়ী হচ্ছে। সৌম্যার কথায়, ‘‘প্রতিষেধক দেওয়ার ফলে অ্যান্টিবডি নির্দিষ্ট সময় পরে কমে এলেও, ‘মেমরি সেল’ দীর্ঘ সময় সক্রিয় থাকছে এবং সেই কোষগুলি ওই ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়।’’ কিন্তু সেই সুরক্ষা কত দিনের, তা এখনই স্পষ্ট বলা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন সৌম্যা। তাঁর মতে, আরও কিছুটা সময় পর তা বোঝা যাবে। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বুস্টার ডোজ় দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব হবে। তাঁর মতে, যে সব স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি দু’টি ডোজ় নিয়েছেন, তাঁদের শরীরে অন্তত এক বছর বা তার বেশি সময় প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় থাকছে বলেই দেখা গিয়েছে। কোনও ব্যক্তি একই প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়ার পরে বুস্টার ডোজ়ের ক্ষেত্রে অন্য প্রতিষেধক ব্যবহারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি সৌম্যা। তাঁর কথায়, ‘‘মূল প্রতিষেধক ও বুস্টার ডোজ় দু’টি আলাদা প্ল্যাটফর্মের হতেই পারে। কিন্তু তার আগে এ বিষয়ে দীর্ঘ গবেষণার প্রয়োজন। তার পরেই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষেধক ব্যবহারের কথা ভাবা যেতে পারে।’’
দেশে উৎসবের মরসুমের পরে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করেছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশের কিছু অংশে করোনা সংক্রমণ সামান্য বাড়লেও, মোটের উপর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ভারতে। তুলনায় পশ্চিম ইউরোপে সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে বলেই জানিয়েছেন ওই বিজ্ঞানী। বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন সৌম্যা। তাঁর কথায়, ‘‘টিকাকরণের কারণে মৃত্যু আটকানো সম্ভব হয়েছে পশ্চিম ইউরোপে। তুলনায় পূর্ব ইউরোপে দেশগুলিতে টিকাকরণের হার কম থাকায় সেখানে মৃত্যুর হারও বেশি।’’ সৌম্যার কথায়, দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরে ভারতের বাসিন্দাদের রক্ত পরীক্ষা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, ৬৫ শতাংশের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। যার অর্থ দেশের বৃহত্তর জনসংখ্যা সে সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে দেশের মানুষের বড় অংশের শরীরে সংক্রমণের কারণে বা টিকাকরণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে টিকাকরণের মাধ্যমে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হচ্ছে তা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর বলেই মত হু-র বিজ্ঞানীর।