আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। ছবি: পিটিআই।
ভারতে অর্থনৈতিক ঝিমুনির প্রভাবে ধাক্কা খাবে বিশ্বের উন্নয়নও। এমনটাই মনে করে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)। সোমবার এ কথা জানিয়েছেন আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। তাঁর মতে, ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হওয়ায় তা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেনে নামাবে আরও ‘০.১’ শতাংশ নীচে।
এ দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নিয়ে পূর্বাভাস করতে গিয়ে আইএমএফ তা দাঁড় করিয়েছে ৪.৮ শতাংশে। ওই পূর্বাভাসে গত তিন মাসের মধ্যেই যা নেমে গিয়েছে ১.৩ শতাংশ নীচে। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি ছাড়াও এ দেশের সামাজিক পরিস্থিতি নিয়েও পর্যবেক্ষণ রয়েছে আইএমএফের। নাগরিকত্ব নিয়ে নয়া আইন (সিএএ)-র বিরুদ্ধে দেশজোড়া বিক্ষোভের দিকে নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছে তারা। শুধু তা-ই নয়, এপ্রিলে তা নিয়ে পর্যালোচনাও করবে তারা।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ-হিংসায় উত্তাল হয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত। দেশজোড়া ওই বিক্ষোভে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ-পড়ুয়া-বিশিষ্টরা। বিরোধিতা করেছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্য সরকারও। যদিও এ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি গীতা। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’-তে বিশেষ সাক্ষাৎকারে গীতা বলেছেন, ‘‘ভারতের সম্পর্কে বিশেষ কিছু বক্তব্য নেই।’’ তবে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ নিয়ে আইএমএফ যে পর্যালোচনা করবে তা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘বিষয়টির গতিবিধির উপর নজর রাখা হবে। এবং এপ্রিলে আমাদের পরবর্তী পর্যালোচনায় তা কোথায় দাঁড়ায়, সেটাও দেখব।’
আরও পড়ুন: নির্বিষ প্রশ্নে স্বচ্ছন্দ মোদী! না করা প্রশ্ন রইল বাইরেই
সুই়ৎজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৫০তম বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়েছে সোমবার। সেখানে বিশ্ব অর্থনীতির একটি সামগ্রিক ছবি তুলে ধরেছে আইএমএফ। স্বাভাবিক ভাবেই আর্থিক বিষয়ের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক পরিস্থিতি নিয়েও পর্যবেক্ষণ রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ নামে একটি রিপোর্টে আইএমএফ জানিয়েছে, বিশ্বের বহু দেশে সামাজিক অস্থিরতা তীব্রতর হচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলির উপর আস্থাহীনতার প্রতিফলন ঘটছে। এবং এ বিষয়গুলি সমাধানের কোনও সংস্থান প্রশাসনিক পরিকাঠামোয় নেই বলেও মনে করছে আইএমএফ।
আরও পড়ুন: ‘ছাত্রজীবন কাটালে তো ছাত্রদের বুঝবেন!’
তবে কি ভারতের দিকেই ইঙ্গিত আইএমএফের? এই প্রশ্নের উত্তরে গীতা চিলে এবং হংকংয়ের নাম উল্লেখ করেছেন। ওই দুই দেশেই প্রতিষ্ঠান-বিরোধী প্রবল বিক্ষোভের নানা কারণ রয়েছে বলে মনে করেন গীতা। সেই সঙ্গে তিনি বিশ্বের অগ্রগতির ক্ষেত্রে সামাজিক সহাবস্থানের গুরুত্বেরও উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যই সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের স্বার্থরক্ষা করাটা খুবই জরুরি। যাতে, উন্নয়নের লক্ষ্যে তারা পিছনের সারিতে চলে না যায়।