(বাঁ দিকে)মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে আসন সমঝোতা না হলে বিজেপি তা ‘ইন্ডিয়া জোটে ফাটল’ হিসেবে তুলে ধরতে পারে বলে বিরোধী শিবিরের নেতারা আশঙ্কা করছেন। বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র একাধিক দলের নেতা মনে করছেন, রাজ্যে রাজ্যে দ্রুত আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলতে না পারলে কিছু দল মিলে আলাদা একটি গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলতে পারে। তাই তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি এবং আম আদমি পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের দ্রুত আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলা উচিত।
শুক্রবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় বৈঠকে স্পষ্ট ভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিরোধী জোটের আসন সমঝোতার সম্ভাবনা দেখছেন না। তিনি দলের নেতাদের রাজ্যের ৪২টি আসনেই একলা লড়াইয়ের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্রের খবর, মমতার এই ইঙ্গিতের পরে এনসিপি-র শরদ পওয়ার, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লার মতো নেতারা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের তরফে সনিয়া, রাহুল গান্ধী ও সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে ব্যক্তিগত স্তরে আরও উদ্যোগী হতে হবে। এই আসন সমঝোতার উপরে উপরে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার সাফল্যও অনেকখানি নির্ভর করছে বলে তাঁদের মত। কারণ, মণিপুর থেকে শুরু হওয়া এই পূর্ব-পশ্চিম যাত্রা পথে পশ্চিমবঙ্গই প্রথম রাজ্য, যেখানে ‘ইন্ডিয়া’-র কোনও শরিক দল সরকারে রয়েছে। সেই যাত্রায় যোগদানের আমন্ত্রণ তৃণমূল নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান করলে বিজেপি সেটিও ‘ইন্ডিয়া-র ফাটল’ হিসেবে তুলে ধরবে। বিজেপি যদি জনমানসে ‘ইন্ডিয়া’য় বিবাদের কথা ঢুকিয়ে দিতে পারে, তা হলে লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে নরেন্দ্র মোদী অনেকটাই এগিয়ে যাবেন।
এর আগে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে দু’টি আসন ছাড়তে রাজি বলে জানায়। কিন্তু শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের পরে মুর্শিদাবাদের জেলা নেতৃত্বকেও অধীর চৌধুরীর বহরমপুর-সহ জেলার তিনটি আসনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত করতে বলেছেন। কংগ্রেসের জাতীয় জোট কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের যেমন তৃণমূলকে দরকার, তেমনই তৃণমূলেরও কংগ্রেসকে দরকার। তৃণমূল যদি মনে করে, একাই লড়ে ২০১৯-এ জেতা ২২টি-র থেকে বেশি আসনে জিততে পারবেন, তা হলে ভুল করবে। ধর্মনিরপেক্ষ ভোট এক বাক্সে পড়লেই তৃণমূল গত লোকসভা ভোটে জেতা ২২টি-র তুলনায় বেশি আসন পেতে পারে। তার জন্য কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট দরকার। মোদী জমানায় বিজেপি এমনিতেই বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় লোকসভা নির্বাচনে বেশি ভোট পায়। এ বার বিজেপি তার সুবাদে বাংলায় গত বারের ১৮টির তুলনায় বেশি আসন পেয়ে যেতে পারে।”
মমতার বক্তব্য, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের নিরিখে কংগ্রেসকে একটি আসনও ছাড়া উচিত নয়। তা সত্ত্বেও তিনি কংগ্রেসকে ২০১৯-এ দু’টি জেতা আসন ছাড়তে রাজি হয়েছেন। উল্টো দিকে প্রদেশ কংগ্রেস প্রাথমিক ভাবে ৯-১০টি আসনে লড়তে চাইলেও মল্লিকার্জুন খড়্গে-রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, কংগ্রেস অন্তত পাঁচ-ছয়টি আসনে রাজি হতে পারে। কংগ্রেসের জাতীয় জোট কমিটির নেতারা মনে করছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে থাকা বহরমপুর, মালদহ দক্ষিণের বাইরে দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়ার মতো আরও তিন-চারটি আসন খুব সহজে কংগ্রেসকে ছেড়ে দিতে পারে। বহরমপুর, মালদহ দক্ষিণের পরে কংগ্রেস ২০১৯-এ মুর্শিদাবাদ, মালদহ উত্তর, জঙ্গিপুরে সবথেকে বেশি ভোট পেয়েছিল।
‘ইন্ডিয়া’-র প্রবীণ সদস্য, ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লা বলেছেন, “আসন সমঝোতা চূড়ান্ত না হলে বিরোধী জোটের বিপদ রয়েছে। কিছু দল নিজেরা মিলে আলাদা জোট করে ফেলল, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। আমার মতে সেটা সবথেকে বড় বিপদ।” রাহুল গান্ধী নিজেই বলেছেন, কিছু রাজ্যে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। তবে সমাধান মিলবে বলে তিনি আশাবাদী। বিরোধী নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গের মতো কংগ্রেস এখনও উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি, দিল্লি-পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির সঙ্গেও আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি।
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অবশ্য আজ বলেছেন, “আসন সমঝোতা বাস্তব পরিস্থিতির ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তৃণমূল রাজ্যের ৪২টি আসনে একাই লড়তে পারে। তবে ‘ইন্ডিয়া’র ঐক্যকে সম্মান জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।” আজ অখিলেশ যাদবও লখনউয়ে বলেছেন, সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেসের মধ্যে আলোচনা চলছে। কে কতগুলো আসনে লড়বে, তার ভিত্তিতে নয়, কে কোন আসন জিততে পারে, তার ভিত্তিতে সমঝোতা হওয়া উচিত। অন্য দিকে কংগ্রেস-আপ নেতারা পঞ্জাবে আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতা রয়েছে বুঝতে পেরে আগে দিল্লি ও গুজরাতে আসন সমঝোতা নিয়ে ফয়সালা করে ফেলতে চাইছেন।