জাতীয় রাজনীতিতে দক্ষিণ ভারতের গুরুত্ব কমবে বলে চিন্তায় পড়েছেন দাক্ষিণাত্যের রাজনীতিকরা। ফাইল চিত্র
দক্ষিণ ভারতের যে একটিমাত্র রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় ছিল, সেই কর্নাটকও সম্প্রতি বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস হলে জাতীয় রাজনীতিতে দক্ষিণ ভারতের গুরুত্ব কমবে বলে চিন্তায় পড়েছেন দাক্ষিণাত্যের রাজনীতিকরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করার পরে নতুন করে সেই আশঙ্কা বেড়েছে।
লোকসভা সাংসদ সংখ্যা এখন ৫৪৩। নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় ৮৮৮টি আসন রাখা হয়েছে। গত পাঁচ দশক ধরে লোকসভার সদস্য সংখ্যা একই রয়েছে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সাংসদ সংখ্যাও বাড়ার কথা। কিন্তু তা করতে গেলে দেশের মধ্যে বিবাদ তৈরি হবে বলে এত দিন এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু মোদী সরকার নতুন সংসদ ভবনে বড় মাপের লোকসভা তৈরি করে বুঝিয়ে দিয়েছে, বিজেপি লোকসভার আসন বাড়ানোর পক্ষে। সংসদের গত অধিবেশনেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিল, আইন অনুযায়ী জনগণনার পরে ২০২৬ সালেই লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস হতে পারে।
দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিকরা মনে করছেন, আসন পুনর্বিন্যাস হলে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির লোকসভার আসন বিশেষ বাড়বে না। উল্টো দিকে উত্তর ভারত এবং পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্যের লোকসভা আসন বিপুল সংখ্যায় বাড়বে। কারণ এই রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মাপকাঠিতে এগিয়ে। সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। তাই এই রাজ্যগুলিতে লোকসভার আসন খুব একটা বেশি বাড়বে না। ফলে সামগ্রিক ভাবে লোকসভায় উত্তর ও পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির পাল্লা ভারী হবে। দক্ষিণ ভারতে তেমন ভাল ফল করতে না পারলেও কোনও দল দেশে সরকার গড়ে ফেলতে পারবে। ফলে দক্ষিণ ভারত রাজনৈতিক গুরুত্ব হারাবে।
কংগ্রেস মনে করছে, উত্তর ভারতের হিন্দি বলয়ে শক্তিশালী হলেও বিজেপি দক্ষিণ ভারতে তেমন ভাবে শিকড় জমাতে পারেনি। ফলে বিজেপিই এর সুবিধা পাবে। কিন্তু তাতে অন্য আশঙ্কাও দেখছেন রাজনীতিকরা। কেরলের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর বলেছেন, ‘‘যদি এই সম্ভাবনা সত্যি হয়, তা হলে দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য তা বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।’’ তামিলনাড়ুর সাংসদ কার্তি চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘যদি শুধুমাত্র জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোকসভার আসন বাড়ানো হয়, তা হলে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির প্রতি অবিচার করা হবে। জনসংখ্যার বৃদ্ধি কম বলে রাজ্যগুলি শাস্তি পাবে।’’
তেলঙ্গানার শাসক দল বিআরএস নেতা, রাজ্যের মন্ত্রী কে টি রামা রাও আজ বলেছেন, রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে দক্ষিণ ভারতের দলগুলির এর বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের পুত্র রামা রাওয়ের প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করেছে বলে কি কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, কর্নাটকের লোকসভার সাংসদ কম হবে? যার ও সব মানেনি, সেই উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি এর সুবিধা পাবে!’’