ফাইল চিত্র। ফাইল চিত্র
যোগী আদিত্যনাথের বিপদ হওয়া দূরের কথা। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা উত্তরপ্রদেশে সক্রিয় হয়ে উঠলে আখেরে তাঁদের লাভই হবে বলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন। কারণ প্রিয়ঙ্কা কংগ্রেসের হয়ে ভোট টানতে পারলে অখিলেশ যাদবের বিজেপি-বিরোধী
ভোটে ভাঙন ধরবে। তাতে বিজেপিরই সুবিধা।
লখিমপুর খেরিতে ঝড় তোলার পরে রবিবার প্রিয়ঙ্কা বারাণসীতে জনসভা করতে চলেছেন। বারাণসীতে তাঁর জনসভার প্রথমে নামকরণ করা হয়েছিল প্রতিজ্ঞা র্যা লি। কিন্তু কৃষক মৃত্যুর ঘটনার পরে জনসভার নাম বদলে হয়েছে কিসান ন্যায় র্যালি।
উল্টো দিকে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে আজ অখিলেশ যাদব ‘সমাজবাদী বিজয় যাত্রা’ ঘোষণা করেছেন। ১২ অক্টোবর থেকে তিনি রাজ্য সফর শুরু করছেন। অখিলেশের জন্য ‘সমাজবাদী রথ’ নামে বিশেষ বাস তৈরি হয়েছে। ২০১২-র বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জিতে আসার আগেও ঠিক এই ভাবে রাজ্য সফরে বেরিয়েছিলেন অখিলেশ।
বিরোধী শিবিরের দুই মেরুর গতিবিধি দেখে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, প্রিয়ঙ্কা যে ভাবে প্রচার শুরু করেছেন, তাতে তিনি অখিলেশের ভোটেই ভাগ বসাবেন। অখিলেশের সমাজবাদী পার্টিই উত্তরপ্রদেশে প্রধান বিরোধী শক্তি। প্রিয়ঙ্কা কখনও হাথরস, কখনও লখিমপুর খেরির ঘটনাকে হাতিয়ার করে যতই কংগ্রেসের পালে হাওয়া টানা চেষ্টা করুন, রাজ্যে কংগ্রেসের তেমন কোনও সংগঠন নেই। ফলে কংগ্রেস কোনও ভাবেই লখনউয়ের তখত দখলের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে না। কিন্তু কংগ্রেসের ভোট বাড়লে বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে।
এসপি, বিএসপি দুই দলই এত দিন বলে এসেছে, উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে কংগ্রেস এখন আর কোনও শক্তি নয়। কিন্তু প্রিয়ঙ্কার নেতৃত্বে কংগ্রেস লখিমপুর খেরি নিয়ে প্রচারে অন্তত এসপি, বিএসপি দুই দলকেই টেক্কা দিয়েছে।
বিজেপির অঙ্ক বলছে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে শুধুমাত্র রায়বরেলী জিতলেও অন্তত ১০টি আসনে এসপি-বিএসপি-আরএলডি জোটের ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছিল। ওই ১০টি কেন্দ্রে বিজেপির জয়ের ব্যবধানের থেকে কংগ্রেসের ভোট বেশি ছিল। এসপি-বিএসপি-আরএলডি মাত্র ১৫টি আসন জিতেছিল। কিন্তু কংগ্রেস সেই জোটে থাকলে বা বিরোধীদের ভোটে ভাগ না বসালে বিজেপির ১০টি আসন কমত।
অখিলেশ আজ ঘোষণা করেছেন, ১২ অক্টোবর তাঁর কানপুর থেকে হামিরপুর পর্যন্ত সমাজবাদী বিজয় যাত্রা শুরু হবে। এই যাত্রার জন্য তৈরি বাসের এক দিকে থাকছে মুলায়ম সিংহ যাদব, রামগোপাল যাদব, আজম খান, নরেশ উত্তম পটেলের মতো এসপি-র প্রবীণ নেতাদের ছবি। অন্য দিকে শুধুই অখিলেশ। সঙ্গে স্লোগান— ‘ইউপি-কা ইয়ে জনাদেশ, আ রহে হ্যায় অখিলেশ’। ২০১৭-র বিধানসভা ভোটের আগে কাকা শিবপাল যাদবের সঙ্গে অখিলেশের বিবাদের খেসারত দিতে হয়েছিল সমাজবাদী পার্টিকে। নবীন-প্রবীণের দূরত্ব মুছে এ বার অখিলেশের নতুন স্লোগান, ‘বড়ো কা হাত, যুবা কা সাথ’।
বিজেপি নেতারা মনে করছেন, বড়দের হাত সঙ্গে থাকলেও, অখিলেশের ভোট কিছুটা হলেও কংগ্রেসের হাত-এ যাবে। অন্য দিকে প্রিয়ঙ্কা যে ভাবে দলিত বস্তিতে ঝাঁট দিচ্ছেন, নিষাদ মাঝিদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন, তাতে বিএসপি-র দলিত ভোটও কাটবে কংগ্রেস। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বললেন, “প্রধান বিরোধী শক্তি সমাজবাদী পার্টি সবে আলসেমি কাটিয়ে মাঠে নামছে। সবথেকে দুর্বল শক্তি কংগ্রেস বেশি রকম আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। বিএসপি-র দিক থেকে মাঠে নামার লক্ষণ নেই। সব দিক থেকেই যোগী আদিত্যনাথের লাভ।”